Coronavirus

ইউএসজি বন্ধ, বিপাকে অন্তঃসত্ত্বারা, লকডাউনে বাড়ছে উদ্বেগ

স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের মত, গর্ভকালীন অবস্থায় তিন বার, কমপক্ষে দু’বার ইউএসজি জরুরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০১:১৭
Share:

সমস্যা: অন্য পরীক্ষা হলেও হচ্ছে না ইউএসজি। নিজস্ব চিত্র

করোনা মোকাবিলায় লকডাউন চলছে। এই সময় জেলার অধিকাংশ আলট্রাসোনোগ্রাফি ক্লিনিক বন্ধ। বন্ধ রয়েছে ব্লক হাসপাতালের সঙ্গে যু্ক্ত পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ল্যাবগুলিও। তাতে বিপাকে পড়েছেন জেলার অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা।

Advertisement

স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের মত, গর্ভকালীন অবস্থায় তিন বার, কমপক্ষে দু’বার ইউএসজি জরুরি। সেটা না হলে সন্তান প্রসবের সময় নানা ধরনের জটিলতার মুখে পড়তে হয় মা ও শিশুকে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ল্যাব টেকনিশিয়ান নন, ইউএসজি করে থাকেন চিকিৎসকেরাই। প্রথমত, করোনা নিয়ে চিকিৎসক মহল ব্যস্ত। ফলে অনেকেই নিজেদের কাজ সমালে ক্লিনিকে যেতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, করোনা সংক্রমণ রুখতে যেটা সবচেয়ে জরুরি, একে অপরের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, সেটাও ইউএসজি করতে গিয়ে সম্ভব নয়। এর ফলে যাতে তিনি নিজে এবং গর্ভবতী মা ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ থাকেন, সেই ভয়ে ক্লিনিক এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

অন্য দিকে, আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃজেলা সীমানা সিল হয়ে আছে। সেই জন্য ভিন্ জেলা থেকে যে সব চিকিৎসক ক্লিনিকগুলিতে এসে ইউএসজি করতেন তাঁরাও আসতে পারছেন না। ফলে জটিলতা তীব্র আকার নিয়েছে।

Advertisement

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘কোনও ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের সবই খোলা। কিন্তু, চিকিৎসক সঙ্কট বা ভিন্ জেলা থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসকরা আসতে না পারায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা এই মুহূর্তে মেটানো শক্ত।’’

মাতৃ ও শিশুমৃত্যু ঠেকাতে গর্ভকালীন সময় মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নজরদারি জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাড টেস্টের পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে আলট্রাসোনোগ্রাফি। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বরূপ থা বলছেন, ‘‘গর্ভাবস্থার তিন, পাঁচ এবং নয় মাসে ইউএসজি করে মাতৃজঠরে কোনও সমস্যা আছে কিনা জানার চেষ্টা করা হয়। গর্ভস্থ সন্তান একক না জমজ, শিশুর শারীরিক ত্রুটি আছে কিনা এবং প্রসবের আগে আসন্ন প্রসবা ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তান কী অবস্থায় রয়েছে। সেই ইউএসজি বন্ধ থকালে সমস্যা তো হবেই।’’ চিকিৎসকদের একটা অংশ বলছেন, ‘‘তিন বার না হলেও গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পরে এবং ৩২ সপ্তাহ পরে ইউএসজি খুব প্রয়োজনীয়।’’ কিন্তু, কোথায় কী ভাবে সেটা করাবেন আগামী দিনের মায়েরা, প্রশ্ন সেখানেই।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমে মোট ১০৫টি ইউএসজি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু, সেগুলির অধিকাংশই বন্ধ। জেলা হাসপাতাল ও মহকুমা হাসপাতাল, দু’একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ইউএসজি হচ্ছে বটে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব অন্তঃসত্ত্বারা। কারণ, গর্ভে সন্তান আসার পরেই নিকটবর্তী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করানোর পরে নিখরচায় যাবতীয় টেস্ট করানো হয়। ইউএসজি করা হয় ব্লক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত পিপিপি ল্যাবে।

কিন্তু, সবই এখন বন্ধ। যানবাহন নেই। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্লক বা মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছে ইউএসজি করানো বা গাঁটের কড়ি খরচ করে প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে ইউএসজি করানো সম্ভব হচ্ছে না। খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থায় থাকা দু’এক জন অন্তঃসত্ত্বাকে জেলা হাসপাতাল বা মহকুমা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু, সেটা হাতেগোনা। কারণ, শুধু বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় বছরে ২৭ হাজার শিশুর জন্ম হয়। এক মাসে সংখ্যাটা কত সহজেই অনুমেয়।

পরিস্থিতি কতটা জটিল একটা উদাহরণেই স্পষ্ট হবে। সম্প্রতি মুরারই-এর একটি ক্লিনিকে ইউএসজির জন্য শতাধিক অন্তঃসত্ত্বা নাম লিখিয়েছিলেন। আন্তঃজেলা সীমানা সিল থাকায় চিকিৎসক আসতে না পারায় সকলকেই ফিরে যেতে হয়। এমনই ছবি গোটা জেলা জুড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement