আটকে: বিষ্ণুপুরের পেট্রোল পাম্পের সামনে ট্রাক চালকেরা। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের প্রচুর মানুষ যখন ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন, তাঁদের দশ জনের দিন-রাত কাটছে ট্রাকের কেবিনে।
উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর গ্রামের গিরিজাশঙ্কর যাদব, বিহারের দ্বারভাঙার শিবাজী যাদব, পুরুলিয়া মফস্সলের চাকদা গ্রামের ফণী গোপ— গত সোমবার থেকে সবার ঠিকানা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর বিষ্ণুপুর। শহরের উত্তরে, বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কের পাশে পেট্রল পাম্পে ট্রাক রেখে সেখানেই ঠাঁই নিয়েছেন। শুক্রবার দেখা গেল, দূরে দূরে ছিটিয়ে গল্পগাছা করছেন। কবে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে, বিষয় সেটাই।
প্রৌঢ় গিরিজাশঙ্কর জানান, পেশার তাগিদে ঘর ছেড়েছেন অনেক দিন আগে। ন’মাসে-ছ’মাসে ফেরেন। কলকাতায় তাঁদের অস্থায়ী ঠিকানা। সেখান থেকে একটি পরিবহণ সংস্থার হয়ে বিষ্ণুপুরে জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘বাড়ির লোকজন ফোনে কান্নাকাটি করছে। ফিরব কী ভাবে, বুঝে উঠতে পারছি না।’’
অন্য রাজ্যের বাসিন্দা শুনে অনেকেই ত্রস্ত হয়ে তাকাচ্ছেন তাঁদের দিকে এমনই দাবি শিবাজীর। তিনি বলেন, ‘‘পাম্প মালিকের সঙ্গে কথা বলে পাশের রাস্তার ধারে দশ চাকার ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছি। কেবিনে চুপচাপ বসে থাকি।’’ তাঁরা জানান, স্থানীয় একটি দোকান থেকে চাল আর আলু কিনেছিলেন। স্টোভে সেদ্ধ করে নিয়ে খাচ্ছেন। এমনি দিনেও তাঁদের রান্না-খাওয়ার পাট এমনটাই থাকে। কিন্তু এখন চিন্তা হচ্ছে, হাতের টাকা ক্রমশ ফুরোতে থাকায়।
গিরিজাশঙ্কর বলছিলেন, ‘‘খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। এ বার এক বেলা করে খেতে হবে মনে হচ্ছে। কেউ খোঁজও নিতে আসেনি। মাঝেমধ্যে মাইকে বলে যাচ্ছে, বাইরে না বেরোতে।’’ জলের অভাবে ক’দিন ভাল করে স্থানটুকুও করতে পারেননি বলে আক্ষেপ করছিলেন তাঁরা।
ওই চালকেরা দাবি করেছেন, খালি ট্রাক নিয়ে রাস্তায় বেরোলেই পুলিশ তাড়া করছে। প্রশাসনের থেকে লিখিত অনুমতি জোগাড় করে কলকাতার অস্থায়ী ডেরায় ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন তাঁরা। তবে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে যে সব ট্রাক রাস্তায় নামে, সেগুলিকে আটকানোর কোনও প্রশ্নই নেয়। খালি ট্রাক নিয়ে তাঁরা স্বচ্ছন্দে কলকাতায় ফিরতে পারেন। প্রশাসন থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে। বিষ্ণুপুর থানায় গেলে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্রও দিয়ে দেওয়া হবে।’’