প্রতীকী ছবি।
পুজো পরবর্তী সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা ছিল চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যে। তা জানতে আরও কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে পুজোর সপ্তাহে রাজ্যের যে সব জেলায় নমুনা পরীক্ষার নিরিখে আক্রান্ত (কেস পজ়িটিভিটি রেট বা সিপিআর) এবং মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী, সেই তালিকায় রয়েছে বীরভূমও।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলা ও প্রশাসন সূত্রে খবর, গত সপ্তাহের আগে কেস পজ়িটিভিটি রেট এই জেলায় ছিল চারের নীচে। সেটাই গত সপ্তাহে উঠে এসেছে ৫.৪৪ শতাংশে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুযোগ থাকলেও আক্রান্তদের সেফ হোমে না যাওয়ার এবং উপসর্গ থাকলেও টেস্ট এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা। সেটাই ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি মানছেন, ‘‘গত সপ্তাহে কেস পজ়িটিভিটি রেট বেশি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও বড় ভূমিকা আছে। তাঁদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।’’
পুজোর আগে ও পরে বাজের হাটে ভিড় ছিলই। আদালতের নির্দেশের পরেও পুজোয় জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন অনেকেই। শহরে সচেতনতার ছবিটা কিছু ভদ্রস্থ হলেও গ্রামের দিকে অনেকে দূরত্ববিধি বজায় রাখা বা মাস্ক পরা থেকে বিরত থেকেছেন এবং এখনও থাকছেন। কোভিডের উপসর্গ দেখা দিলেও স্বেচ্ছায় কেউ টেস্ট করাতে আসছেন না। তাতে নিঃশব্দে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার কাজটা করে চলেছেন অনেকই। আর একটি প্রবণতা হল কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পরেও সেফ হোমে যেতে না চাওয়ার প্রবণতা। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় ৬৩৪ জন কোভিড রোগী হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। যাঁরা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন, তাঁদের প্রতি নজরদারিও সেভাবে রাখা সম্ভব নয়। যে কোনও সময় যে কোনও কোভিড রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে। হতে পারে অন্য উপসর্গও। তখন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। উদ্বেগ বাড়িয়ে জেলায় মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী, (১.৬৬)। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
বোলপুরে ৯০ শয্যার কোভিড হাসপাতালের পাশাপাশি বোলপুর ও দুবরাজপুরের নিরাময় টিবি স্যানেটেরিয়ামে মোট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সেফ রয়েছে। কিন্তু, সেফ হোমে আসতে চাইছেন না উপসর্গহীন আক্রান্তদের প্রায় কেউই। পুজো পরবর্তী সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে ধরে নিয়ে নিরাময় সেফ হোমকে কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার অনুমোদন চেয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ১৫টি শয্যাকে প্রয়োজনে উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
সিএমওএইচ বলছেন, ‘‘প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রতিদিন হোম আইসোলেশনে থাকা প্রতিটি কোভিড আক্রান্তের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা চাই উপায় থাকলে বাড়িতে না থেকে সেফ হোমে আসুন।তাতে ঝুঁকি অনেক কমবে।’’ জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার টেস্টের জন্য ১৮০০ জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মানুষ সচেতন হলে টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যত বেশি টেস্ট হবে, সংক্রমণের ছবিটা তত স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়বে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া যাবে।