প্রতীকী চিত্র
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি মেনে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা গড়তে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। শুক্রবার জেলা প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স হলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে বৈঠক করেন জেলাশাসক। জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তা, সিএমওএইচ, হাসপাতালের সুপার, বিএমওএইচ, সমস্ত ব্লকের বিডিও, রেড ক্রশ সোসাইটি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের গাইডলাইন মেনে এই রোগের সংক্রমণ আটকাতে কী করা উচিত, কী নয় সে ব্যাপারে জন সচেতনতা গড়ে তোলা। তবে এই বৈঠক ছাড়াও বিকেলে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্তারা। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি জেলায় একটি করে টোল ফ্রি নম্বর চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ কোনও সমস্যায় পড়লে সেটা জানাতে পারেন। তবে মাস্কের আকাল নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি নির্দেশ দেন, যে সব দোকান মাস্ক নিয়ে কালোবাজারি করছে, তাদের প্রতি পুলিশ যেন নজর রাখে। এ দিনের প্রথম বৈঠক সেরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘এই রোগ নিয়ে জনসচেতনতা কী ভাবে গড়ে তোলা যায়, মানুষ যাতে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেই বার্তা স্বনির্ভর দল, পড়ুয়াদের মাধ্যমে কী ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সচেতন করা হবে। প্রচার চলবে ব্লক থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত।’’
প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, আজ, শনিবার প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে মান্থলি মিটিং হবে। সেখানে উপস্থিত থাকেন গ্রাসরুট লেভেলের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী বা এএনএমরা। তাঁদের এ দিনই এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিত ও সচেতন করা হবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবকেও। আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে জন সচেতনতাই মূল হাতিয়ার। সেই লক্ষ্যেই জনসচেতনতা গড়ায় জোর দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, শুক্রবার পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ জন। লাফিয়ে না হলেও দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণের আশঙ্কায় সারা দেশেই বাড়ছে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। সেটা মোকাবিলায় তৎপরতা বেড়েছে সব স্তরে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জেলাকে যে পদক্ষেপ করার কথা বলেছে সেগুলি হল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং মহকুমা হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার জন্য দ্রুত জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে বেশ কয়েকটি শয্যা রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় আরও কিছু পরিকাঠামো যেমন চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পোশাক বা প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই, মাস্ক, ওষুধ তৈরি রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানান, জেলা, মহকুমা এমনকি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। মাস্ক ও পোশাকও রয়েছে।
চিকিৎসকদের একটা অংশ জানাচ্ছেন, অন্য আর পাঁচটা ফ্লু-ভাইরাসের মতোই এর উপসর্গ। কিন্তু, মৃত্যু হার অন্য ভাইরাস অপেক্ষা বেশি হওয়ায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য এটা মারাত্মক আকার নিয়েছে। সবচেয়ে সমস্যার হল, এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ভ্যাকসিন বা ওষুধ নেই। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম এমন মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঘটতে পারে। সেই সমস্যার উল্লেখ করে গত ৪ তারিখ সমস্ত জেলাশাসকদের পাঠানো চিঠিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।