পুরুলিয়া শহরে এই গাড়ি থেকেই প্রচার চলে বলে দাবি।—নিজস্ব চিত্র।
করোনার সংক্রমণ রুখতে সমস্ত পানের দোকান বন্ধের নির্দেশ সংক্রান্ত প্রচার ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়াল পুরুলিয়া শহরে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার চালানো হয় যে, পুরুলিয়া শহরের সমস্ত পানের দোকান বা পানগুমটি বন্ধ করার নির্দেশ জারি করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শহরের সমস্ত পানের দোকান পুরোপুরি ভাবে বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি, চায়ের দোকানে জটলাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
তবে শুধু পানের দোকান বন্ধের নির্দেশ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। জেলা প্রশাসন ও পুরুলিয়া পুরসভার তরফে এমন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের যদিও বক্তব্য, ‘‘পানের দোকানে পান খেয়ে চারপাশে থুতু ফেলার প্রবণতা থাকে। সেটাই বন্ধের কথা বলা হয়েছে।’’ এ দিকে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, পানের দোকানে যেহেতু ভিড় জমে, তাই পানের দোকান বন্ধ। তবে কোনও পানের দোকানে স্টেশনারি জিনিসপত্র থাকলে সেই দোকান খোলা থাকতে পারে।
এ দিন দুপুরের পরে শহরের নানা রাস্তায় ই-রিকশায় মাইক বেঁধে প্রচার শুরু হয়। পানের দোকান বন্ধের পাশাপাশি, চায়ের দোকানদারদের উদ্দেশ্যেও জানানো হয়েছে, চায়ের দোকানের সামনে কোনও জমায়েত বা আড্ডা দেওয়া যাবে না। চা খেতে হলে দোকান থেকে চা নিয়ে সরে যেতে হবে। বসার জন্য কোনও চেয়ার, টেবিল বা টুল রাখা যাবে না। চায়ের দোকানের সামনে ভিড় না করার বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আনাজ বাজার, মিষ্টির দোকান, মুদির দোকান সবই খোলা রয়েছে। সর্বত্রই হাতে হাতে দেওয়া-নেওয়া চলছে। তা হলে শুধু পানের দোকানের জন্যই এমন নির্দেশ কেন? শহরের একাধিক পানের দোকানদারের ক্ষোভ, ‘‘জটলা না করার কথাই বলা হচ্ছে। তবে দোকান বন্ধের নির্দেশ কেন? সংসার চলবে কী করে?’’
বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘পানের বা চায়ের দোকান বন্ধ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসন কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। আগেও বলা হয়েছে, শুধু চায়ের বা পানের দোকানই নয়, কোথাও ভিড় করা যাবে না। গুটখা বা পান খেয়ে প্রকাশ্যে থুতু ফেলা যাবে না। কোনও দোকান বন্ধ করা নিয়ে কোনও প্রশাসনিক নির্দেশিকা নেই।’’ পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক সামিমদাদ খানও বলেন, ‘‘এই মর্মে পুরসভার কাছে কোনও খবর নেই। অনেকেই আমার কাছেও জানতে চাইছেন। পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’’ একই বক্তব্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি নিজে এ দিন পুলিশের ঘোষণা শুনেছি। যখন কলকাতায় মেট্রো চালানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বা স্বাভাবিক ভাবে বাস চলছে, তখন বুঝতে পারছি না এই বিভ্রান্তিকর নির্দেশিকা কেন। সরকারের তরফে শুধু পানের দোকান বন্ধ নিয়ে এমন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে শুনিনি। খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’ সিপিএমের পুরুলিয়া শহর (উত্তর) এরিয়া কমিটির সম্পাদক নিলয় মুখোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, ‘‘ভিড় করা যাবে না, প্রচার করা হলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু শুধু পানের দোকান কেন বন্ধ থাকবে? তার থেকে তো হাটে বেশি ভিড় দেখা যায়।’’