খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রাজীব পানের এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
খয়রাশোলের ব্লক তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মেটাতে মঙ্গলবারই সিউড়িতে, জেলা কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল বিবদমান দু’পক্ষকে। তার আগে, সোমবার ব্লক সভাপতিকে আক্রমণ করে দলেরই ‘বিরোধী গোষ্ঠী’-র এক পঞ্চায়েত সদস্যের সমাজমাধ্যমে একাধিক ‘আপত্তিকর’ পোস্ট সমস্যা জটিল করে তুলল। ফের সামনে এল খয়রাশোল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী এবং ব্লকের প্রাক্তন পর্যবেক্ষক সুদীপ্ত ঘোষের শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব।
তৃণমূলের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারীর তরফে সোমবার রাতেই ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আগে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে এবং ঘটনার নেপথ্য কে বা কারা খুঁজে বের করতে হবে, এই দাবিতে সিউড়ির বৈঠকেই গেলেন না ব্লক সভাপতি এবং তাঁর অনুগামীরা। পাশাপাশি পুলিশকে স্মারকলিপি দেওয়া হল শাসকদলের পক্ষ থেকে। সিউড়িতে মঙ্গলবার যায়নি বিপক্ষ গোষ্ঠীও। সব মিলিয়ে খয়রাশোলে দ্বন্দ্ব মেটার কোনও লক্ষণই দেখা গেল না। বরং তা আরও জটিল হল বলেই মনে করছেন এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বড় অংশ।
জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্কের জেরে খয়রাশোল থেকে কেউ আসেননি। ওঁদের পরে ডাকা হবে। তবে, এই ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন , তাঁর সুনাম নেই। পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই রাজীব পান খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। ব্লক সভাপতিকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের’ পাশাপাশি যে পোস্ট ঘিরে চর্চা এলাকায়, তাতে লেখা— ‘সুদীপ্ত ঘোষ (ছোড়দা) জিন্দাবাদ। তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ। রাজনীতিরর অবৈধ কারবারি কাঞ্চন অধিকারী মুর্দাবাদ’। দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, খয়রাশোলের রাজনীতিতে মূল বিবাদ কাঞ্চন ও কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্তের নেতার সংঘাতকে কেন্দ্র করেই। সূত্রের খবর, ব্লক সভাপতি না ব্লকের প্রাক্তন পর্যবেক্ষক সুদীপ্ত, কার ‘নিয়ন্ত্রণে’ থাকবে খয়রাশোল ব্লক, এই প্রশ্নে কার্যত দু’ভাগ তৃণমূলের স্থানীয় সংগঠন। ব্লক সভাপতি ও তাঁর অনুগামী এবং সুদীপ্ত ঘোষের অনুগামীদের, দুটি সমান্তরাল সংগঠনকে ঘিরে দ্বন্দ্ব চরমে। এমনকি, চলতি মাসে বোলপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচনের ভোটাভুটিতে যোগ পর্যন্ত দেননি খয়রাশোলের বিক্ষুব্ধেরা। সেটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছেছিল। তাঁর নির্দেশ ছিল, কোনও পর্যবেক্ষক যেন খয়রাশোলের না-থাকে। মিটিয়ে ফেলতে হবে যাবতীয় দ্বন্দ্ব।
খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রাজীব পানের এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু, তাতেও সমস্যা না-মেটায় মঙ্গলবার কোর কমিটির দুই সদস্য তথা সাংসদ শতাব্দী রায় ও বিকাশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে বৈঠক ডাকা হয় সিউড়িতে। তার মধ্যেই বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত ও সুদীপ্তর ‘অনুগামী’ রাজীব পান সোমবার একের পর পোস্ট করেন। ব্লক সভাপতিকে আক্রমণ করা ছাড়াও তাঁর স্ত্রী ও ব্লকের অন্যান্য পদাধিকারীর পদবি উল্লেখ করে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তাতেই বিতর্ক কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।
ব্লক সভাপতি কাঞ্চন বলেন, ‘‘শুধু ফেসবুকেই নয়, আমি সোমবার কেন্দ্রগড়িয়ায় সাংগঠনিক সভা করছিলাম, তখনই আমাকে ফোনে হুমকি দেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য। এ ভাবে চলতে পারে না।’’ ব্লক সভাপতির সঙ্গে থাকা নেতাদের দাবি, প্রকাশ্যে না-থাকলেও ‘খেলাটা’ উপর থেকে চলছে। এর একটা বিহিত দরকার। তাই এ দিন বিকেলে থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
ব্লক সভাপতির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী এবং সুদীপ্তের অনুগামী বলে পরিচিত খয়রাশোলের এক নেতারও বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। পুলিশ ব্যবস্থা নিক। এই প্রথম নয়। এর আগেও বিতর্কিত পোস্ট করেছেন ওই পঞ্চায়েত সদস্য।’’ রাজীবের ফোন বন্ধ থাকায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি।