মনোনয়নে বাধা, মারধরের অভিযোগ তুলল কংগ্রেস

জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের কাজ। সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসছে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মনোনয়নের কাজে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগও। কোথাও কোথাও মারধরেরও। বিরোধীরা লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করার কথাও ভাবছেন। জেলা তৃণমূল অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩২
Share:

জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের কাজ। সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসছে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মনোনয়নের কাজে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগও। কোথাও কোথাও মারধরেরও। বিরোধীরা লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করার কথাও ভাবছেন। জেলা তৃণমূল অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৫ সেপ্টেম্বর। জেলার সাঁইথিয়া ব্লকে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির উপ নির্বাচন মনোনয়ন পত্র দাখিলের কাজ শুরুর মুখেই মনোনয়নে বাধা ও বিরোধীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার কংগ্রেস এমনই অভিযোগ করে শাসক দলের বিরুদ্ধে। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার শাসক দলের পক্ষ থেকে সবকটি আসনেই মনোনয়ন পত্র দাখিল করা হয়। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করে সিপিএম।

এ দিন দুপুরে সাঁইথিয়া বিডিও অফিসে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যায় কংগ্রেস। অভিযোগ, সে সময় তাঁদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় তৃণমূলের সমর্থকেরা।

Advertisement

“গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা
মহিলা প্রার্থীদের আটকে রাখে। যাঁরা প্রার্থীদের হয়ে প্রস্তাবক ও সমর্থক গিয়েছিলেন
তাঁদেরকেও মারধর করে তৃণমূল।” —সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, (সভাপতি, জেলা কংগ্রেস)

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘এ দিন আমাদের কর্মীরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়েছিল। ব্লক কার্যালয়ের মধ্যে মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন, সে সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মহিলা প্রার্থীদেরকে আটকে রাখে।’’ তাঁর দাবি, প্রার্থীদের হয়ে যাঁরা প্রস্তাবক ও সমর্থক গিয়েছিলেন তাঁদেরকেও মারধর করে তৃণমূল। এ দিন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির ১০, হরিসড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সাত ও আমোদপুরের ১২ নম্বর আসনে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যান। তখনই হামলা হয় তাঁদের উপর।

কংগ্রেসের দাবি, ‘‘সমস্ত ঘটনা পুলিশের সামনেই ঘটেছে। এবং পুলিশ কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিল।’’ পুরো ঘটনা মৌখিক ভাবে সাঁইথিয়া থানায় ও জেলা পুলিশ সুপারকে জানায় কংগ্রেস। পরে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হবে, বলেও জানায় নেতৃত্ব।

তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমনাথ সাধু বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অভিযোগ হাস্যকর। কার্যত ব্লকে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্বই নেই। হাতে গোনা কয়েকজন আছেন, যাঁরা সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে প্রচারের আলোয় আসার জন্যই নানা রকম নাটক করে চলেছেন। এভাবে বেশি দিন রাজনীতি করা যায় না।’’ সাঁইথিয়ার মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে ঘটনার প্রেক্ষিতে বিডিও অতুনু ঝুরি বলেন, ‘‘ঘটনার কথা কানে এসেছে। দেখা হবে।’’

তেমন কোনও অশান্তির খবর না মিললেও মনোনয়নকে ঘিরে ভোট হাওয়া বোলপুর-দুবরাজপুরেও। ইলামবাজার ব্লকের ইলামবাজার থানা ও পাড়ুই থানা এলাকার দুই সংসদে ইতিমধ্যেই শাসক দল তৃণমূল সোমবার তাদের মনোনয়ন দাখিল করেছে। বৃহস্পতিবারই ছিল মনোনয়নের শেষ দিন। বিরোধীদলগুলির মনোনয়ন পত্রও জমা পড়ে এ দিন। ইলামবাজারের বিডিও উৎপল পাতসা বলেন, ‘‘শীর্ষা পঞ্চায়েতের চার নম্বর সংসদ নবগ্রামের জন্য একটি মনোনয়ন পত্র ও মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের দু’নম্বর সংসদ ব্রাহ্মণডিহির জন্য একটি মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে।” বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী বলেন, “সাত্তোর পঞ্চায়েতের ছয় নম্বর সংসদ সালনে উপ-নির্বাচন হবে। মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি।”

উল্লেখ্য, বীরভূমের ইলামবাজার ও বোলপুর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করে বিজেপি। এমনকী ইলামবাজার ও পাডুই থানা এলাকার একাধিক জায়গায় তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একাধিক খুন, জখম, বোমাবাজি এবং ঘরবাড়িতে লুঠপাটের ঘটনা ঘটে জেলার বিশেষ করে এই দুই থানা এলাকায়।

এ হেন পরিস্থিতিতে ওই দুই থানা এলাকার পঞ্চায়েতের তিনটি সংসদে উপ-নির্বাচনে, বিরোধী দলগুলির কি অবস্থান, তা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন অনেকেই। তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ জাফরুল ইসলাম বলেন, “ব্লকের শীর্ষা পঞ্চায়েতের নবগ্রাম সংসদের জন্য ও মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মনডিহি সংসদের জন্য সোমবার দু’জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।” এ দিকে বোলপুর ব্লকের সাত্তোর অঞ্চলের তৃণমূল সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মুস্তফা বলেন, “পঞ্চায়েতের সালন সংসদের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া হয়েছে।”

বিজেপি-র অন্যতম জেলা কমিটির সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, “মঙ্গলডিহির ব্রাহ্মণডিহি সংসদের জন্য বৃহস্পতিবার শীর্ষা পঞ্চায়েতে, নবগ্রামের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে।” বুধবার ও বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা বলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা।

অন্য দিকে, দুবরাজপুর ব্লকের একটি পঞ্চায়েত সমিতির এবং দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেও উপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার তিনটি আসনের জন্য তিনটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ব্লক প্রশাসন আরও জানিয়েছে যে তিনটি আসনে পুননির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা পড়ল সেগুলি হল সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ওই পঞ্চায়েত এলাকার একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন। অন্য গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটি হচ্ছে বালিজুড়ির গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement