Uttarakhand

নিখোঁজেরা কি মৃত?, আশা ছাড়েনি গ্রাম

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে হিমবাহ বিপর্যয়ে হড়পা বান নেমে আসে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে ঋষিগঙ্গা নদীর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ভেসে যায় আশপাশের এলাকা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

আড়শা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:১৮
Share:

অশ্বিনীর পরিবার। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

এক বুক আশা নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরেছেন, উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে ঋষিগঙ্গা নদীর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ধ্বংসলীলার ছবি দেখে। দেখেছেন, পাথর ও কাদার স্তূপের মধ্যে কী ভাবে নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আশায় ছিলেন, ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিখোঁজ থাকা ঠিকা শ্রমিক শুভঙ্কর তন্তুবায় (২১) ও অশ্বিনী তন্তুবায়ের (২৫) কোনও খবর নিশ্চয় পাওয়া যাবে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরিজনেরা দিয়ে এসেছেন নিজেদের নখ, রক্তের নমুনা। উত্তরাখণ্ডের সরকার ওই দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের মৃত ঘোষণা করলেও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি পুরুলিয়ার আড়শার বাগানডি গ্রামের ওই দুই পরিবারকে। তাঁদের একমাত্র আশা, কোনও ‘আশ্চর্যের’— যদি ফিরে আসেন গ্রামের ছেলেরা।

Advertisement

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে হিমবাহ বিপর্যয়ে হড়পা বান নেমে আসে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে ঋষিগঙ্গা নদীর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ভেসে যায় আশপাশের এলাকা। তারপর থেকেই ফোনে কোনও ভাবে ওই দুই ঠিকা শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁদের পরিজনেরা। মঙ্গলকামনায় মন্দিরে, গ্রামথানে পুজো, মানত করেছেন।

শুভঙ্করের দাদা রবীন্দ্র তন্তুবায়, অশ্বিনীর দাদা লক্ষ্মীকান্ত তন্তুবায়-সহ চার জন খোঁজ করতে উত্তরাখণ্ডে যান। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁরা ফিরেছেন। রবীন্দ্র বলেন, ‘‘ওখানে না গেলে বোঝা যেত না, কত বড় বিপর্যয় ঘটেছে। সব কিছু একেবারে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। আশা ছিল, ভাইদের খুঁজে বার করতে পারব। পেলাম না। বাড়িতে টিভি নেই। তাই উত্তরাখণ্ড সরকার কী ঘোষণা করেছে জানি না। তবে মৃত ঘোষণা করা হলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ নিশ্চয় পাঠাবে। আর তো সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

Advertisement

লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম, সুড়ঙ্গে কোনও জায়গায় আমাদের ছেলেরা ঢালাইয়ের কাজ করছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি জল খেতে অন্যত্র গিয়েছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান, কুয়াশার মত কিছু ধেয়ে আসছে। পরে তা জলস্রোত বুঝতে পেরে চিৎকার করে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি।’’ তিনি জানান, তাঁরা থাকাকালীন পাঁচটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। শেষে তাঁরা চুল, নখ, রক্তের নমুনা সেখানে দিয়ে এসেছেন। জানিয়েছেন, কোনও খবর পেলে যেন তাঁদের জানানো হয়। লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘এ দিন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি। নিখোঁজদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলেও সরকারি ভাবে জানানো হয়নি।’’

এক বছরের সন্তান হিমাংশুকে বুকে চেপে স্বামীর ফোনের আশায় দিন কাটাচ্ছেন অশ্বিনীর স্ত্রী অনিতা। তিনি বলেন, ‘‘বিপর্যয়ের দিন সকালেই ফোনে কথা হয়েছিল। আর ফোন আসেনি। এমন কখনই ঘটেনি যে ও আমার সঙ্গে দিনে দু’-তিন বার কথা বলেনি। বুঝতে পারছি না কী ঘটল। ছেলেকে কী ভাবে মানুষ করব?’’

আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘‘উত্তরাখণ্ড সরকারের ঘোষণার কথা শুনেছি। জেলা প্রশাসনের কাছে পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। রাজ্য সরকারের কাছেও আর্জি জানাব।’’

পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিখোঁজের খবর শোনার পর থেকেই জেলা প্রশাসন ওই দুই পরিবারের পাশে রয়েছে। আমরা পরিবারের লোকজনকে উত্তরাখণ্ডে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেছিলাম। আগামী দিনেও প্রশাসন তাঁদের
পাশে থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement