প্রতিযোগিতায় কনে সাজাচ্ছেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বিউটিশিয়ানরা। —নিজস্ব চিত্র।
পেটের দায়ে কনে সাজাতে মেকআপ বক্স নিয়ে অনুষ্ঠান বাড়িতে ছুটে যাওয়া। এতদিন বিষয়টিকে নেহাত পেশা হিসেবেই দেখতেন বিউটিশিয়ানরা। তবে এই পেশার আড়ালে যে শিল্প লুকিয়ে রয়েছে এবং সেই শিল্প এনে দিতে পারে খ্যাতিও, বুঝতে পারেননি অনেকেই। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তির মতো বিষয়ে প্রতিযোগিতা তো আকছার হয়। ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের উদ্যোগে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় এই সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি এ বার প্রতিযোগিতার স্তরে উঠে এলো ‘কনে সাজানো’ পেশাটিও।
গোটা রাজ্য জুড়েই প্রতিভার সন্ধান শুরু করেছে ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, ব্যান্ড গান, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ও কনে সাজানো, এই ছ’টি বিষয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে প্রতিভাবানদের খুঁজে নিয়ে আসছে এই সংস্থা। জেলাস্তরে প্রতিটি বিভাগের প্রথম তিনজনকে নিয়ে রাজ্যস্তরে হবে মেগা ফাইনাল। জয়ীরা পাবেন নিজেদের নাচ, গান, আবৃত্তির অ্যালবাম বানানোর সুবিধা। আর কনে সাজানো প্রতিযোগিতায় যাঁরা জয়ী হবেন রাজ্য সরকারের বিউটিশিয়ান কোর্স তাঁদের নিখরচায় করার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে অন্যান্য বিভাগগুলির তুলনায় আলাদা ভাবে নজর কেড়েছে কনে সাজানো প্রতিযোগিতাটি।
বাঁকুড়ার রামকিঙ্কর যুব আবাসে রবিবার অনুষ্ঠিত একেবারে আনকোরা এই বিষয়টিতে যোগদান করেছিলেন মোট আটজন বিউটিশিয়ান। যার মধ্যে ছ’জন বাঁকুড়া ও দু’জন পুরুলিয়া থেকে যোগ দিয়েছিলেন। কনে সাজানোর জন্য প্রত্যেকে একটি করে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। কনে সাজিয়ে বিচারকদের মন কাড়াই ছিল লক্ষ্য।
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বাঁকুড়ার রাখী পাল ও দ্বিতীয় হয়েছেন ইপ্সিতা তিওয়ারি। প্রতিযোগীর সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় তৃতীয় জনকে বাছাই করেনি সংস্থা। বাঁকুড়া থেকে এই দু’জনেই কলকাতায় মেগা ফাইনালে যোগ দেবেন। দু’জনেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এ দিন থেকেই। তবে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় বিউটি পার্লারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার পরেও এত কম প্রতিযোগী কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদ্যোক্তা সংস্থার তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, তাঁরা স্কুল-কলেজ, বিউটি পার্লারগুলিতে জানিয়েছিলেন। শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলিতে হোর্ডিং দিয়েও প্রতিযোগিতার প্রচার চালানো হয়েছিল। তারপরেও প্রতিযোগিতার মঞ্চ অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা।
বাঁকুড়ার কালীতলার বিউটিশিয়ান শ্রাবনী দাস বলেন, “আমার কাছে প্রতিযোগিতার খবর এসেছিল। কিন্তু এই দিনটায় ব্যক্তিগত কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। তবে বিষয়টি ভাল।” বিষয়টিতে অনেকেই উৎসাহিত হবেন বলে মনে করছেন রামপুরের বিউটিশিয়ান গৌরী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমি নিজে যেতে পারিনি। তবে প্রতিযোগিতাটির মধ্য নতুনত্ব রয়েছে। এই ধরনের প্রতিযোগিতা আমাদেরও একটু অক্সিজেন দিল। একঘেয়েমি পেশার বাইরেও কনে সাজানো বিষয়টিকে শিল্প হিসেবে দেখতে শিখলাম আমরা।”
বাঁকুড়ায় তুলনামূলক সাড়া কম পেলেও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলিতে কনে সাজানো প্রতিযোগিতায় দারুন সাড়া মিলেছে বলে জানাচ্ছেন ওই বেসরকারি সংস্থার মুখপাত্র শুভপ্রসাদ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কোচবিহারে এত নাম এসেছিলে যে আমরা সবাইকে সুযোগ করে দিতে পারিনি। একই অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুর ও আলিপুরদুয়ারেও। বাঁকুড়ায় সাড়া একটু কম পেলাম। তবে সামনেরবার চিত্রটা বদলাবে বলেই আমরা আশাবাদী।” প্রতিযোগিতার ছ’টি বিভাগে মোট ১২৪ জন প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।