সমীক্ষা দেখে অবাক প্রশাসনই

বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে কোপ কলেজ, বাড়ির

বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী সাত বাঁধই বেদখল করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। এ বার লালবাঁধের সামগ্রিক সংস্কারের কাজে নামতে গিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:০১
Share:

বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী সাত বাঁধই বেদখল করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। এ বার লালবাঁধের সামগ্রিক সংস্কারের কাজে নামতে গিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছে প্রশাসন। লালবাঁধের কিছু অংশ বেদখল করে শুধু ঘরবাড়িই ওঠেনি, বাঁধের জায়গায় একটি কলেজের একাংশও ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠে। যদিও ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ব্যাপারে প্রশাসন তাঁদের কিছু জানায়নি।

Advertisement

রাজ্যে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে লালবাঁধের পাড়ের সৌন্দার্যায়ণের কাজ শুরু হয়েছিল। যদিও তা শেষ হয়নি। এ বার দ্বিতীয় দফায় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় ফিরে ওই বাঁধ সংস্কারে নামতে চলেছে। তবে সে কাজ এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আপাতত ওই বাঁধের কোন অংশ, কতটা বেদখল হয়ে গিয়েছে ভূমি ও পূর্ত দফতর তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে নেমেছে।

বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ তাঁর প্রেমিকা লালবাঈয়ের নামে কাটিয়েছিলেন এই বাঁধ। রাজধানী বিষ্ণুপুরকে একই রকম সাতটি বাঁধের বৃত্তে ঘিরে রাখা হয়েছিল। ফলে জলকষ্ট কী, বিষ্ণুপুরবাসী কখনই তা অনুভব করেননি। মল্লরাজাদের সময়ে খনন করা সাত বাঁধের সেই ঐতিহ্য আর নেই। বাকি বাঁধগুলোর মতো লালবাঁধেরও চারপাশের কিছুটা করে অংশ মজে গিয়েছে। সেই সব জায়গায় মাটি ফেলে বাড়িঘর উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে অনেকদিন ধরেই। প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি ওই বাঁধের মাপজোক করতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের পশ্চিম দিকে বেশ কয়েকটি পাকা বাড়ি ও রামানন্দ কলেজের কিছু অংশ ঢুকে পড়েছে। বিতর্কিত ওই জায়গায় ইতিমধ্যে পিলার পুঁতে বাঁধের জায়গা বলে চিহ্নিত করা চলছে।

Advertisement

বিষ্ণুপুরের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক কিঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরনো ম্যাপ (আরএস) রেকর্ড ধরে জানতে পেরেছি লালবাঁধের আয়তন ৭৪ একর। সে ভাবেই মাপজোপের কাজ এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি কিছু জবরদখল চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে রামানন্দ কলেজের সামান্য কিছু অংশও ঢুকে পড়েছে।’’ বিষ্ণুপুরের পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দীপঙ্কর জানা বলেন, ‘‘পশ্চিম দিকের পাড়ের মাপজোপ শেষ হলেও বৃষ্টি নামায় পূর্ব দিকের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। ওই অংশেও জবরদখল হয়ে থাকলে তা চিহ্নিত করা হবে। আমরা ম্যাপ ধরে পিলার বাসানোর কাজ চালাচ্ছি।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, ‘‘এই বাঁধটির সঙ্গে মল্লরাজাদের নানা ইতিহাস জড়িত। ফলে বহু পর্যটক এখানে আসেন। তাই বিষ্ণুপুরের পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে বাঁধটিকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু জবরদখল কি মুক্ত করা যাবে? এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাঁধের গা ঘেঁষেই রয়েছে কিছু ঘর-বাড়ি। রয়েছে রামানন্দ কলেজের পাঁচিল। তার পাশেই রয়েছে ভবন। বেদখলের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না ঘোড়ই বলেন, ‘‘আমাদের কলেজের কোনও অংশ বাঁধের ভিতরে ঢুকেছে কি না বলতে পারব না। সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে আমরা এখনই কিছু মন্তব্য করছি না।’’ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বাঁধের পাড়ের বাসিন্দারাও।

বস্তুত একসময়ে এই বাঁধের জল টলটল করত। কিন্তু এখন অধিকাংশ জলাভূমিই পানায় ঢাকা। কোনওরকমে আবর্জনা সরিয়ে লোকজন স্নান করেন। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, আগে শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত। তা পর্যটকদের কাছে দ্রষ্ট্রব্য হয়ে ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা বদলে গিয়েছে। লালবাঁধের জল দূষিত হয়ে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিযায়ী পাখিরাও ঠিকানা ভুলেছে লালবাঁধের।

প্রশাসন জানাচ্ছে, পুরো বাঁধটিই সংস্কার করা হবে। সেই সঙ্গে বাঁধের সমগ্র পাড় সাজানো হবে। সেখানে দু’দণ্ড বসতে পারবেন মানুষজন। এ ছাড়ায় বাঁধে পর্যটকদের জন্য নৌকাবিহারের ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রকল্পের মূল কাজ করবে জেলা কৃষি ও সেচ দফতর। প্রাথমিক পর্যায়ে মাপজোক ও সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ করছে ভূমি ও পূর্ত দফতর। বিষ্ণুপুরের কৃষি ও সেচ দফতরের আধিকারিক বিকাশচন্দ্র নন্দী বলেন, ‘‘মাপজোকের পরেই প্রকল্পের টাকা অনুমোদনের জন্য রাজ্যে পাঠানো হবে।’’

কিন্তু দখলমুক্ত করা না গেলে পরিকল্পনামাফিক কাজ হবে কী করে? এ নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, ‘‘বেদখল উচ্ছেদ করে লালবাঁধকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। দখলমুক্ত করতে কোনওরকম আপোস করা হবে না।’’ বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরের বাঁধগুলি নিয়ে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কথা মুখ্যামন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলাম। তিনি সম্মত হওয়ায় এতদিনে লালবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement