কপালে ভাঁজ সেচ দফতরের

বাঁধের ধারে কয়লা চুরি খয়রাশোলে

সেচদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার সেচ ব্যবস্থা উন্নত করতে ১৯৭৬ সালে হিংলো নদীর গতিপথে নির্মিত হয় বাঁধটি। হিংলোর ওই জলাধার ঘেঁষেই, গাংপুর ভাদুলিয়া সগড়ভাঙার বিস্তীর্ণ এলাকায় মাটির কয়লা রয়েছে। এবং বহুকাল ধরেই এলাকায় বেআইনি কয়লা উত্তোলন চলে।

Advertisement

নিজস্ব সাংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৭
Share:

চলছে কয়লা তোলার কাজ। প্রতীকী ছবি।

অবৈধ খাদানের দখলদারি বোমা বন্দুকের লড়াই, খুন খয়রাশোলে নতুন ঘটনা নয়। অবৈধ খাদান থেকে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ধস নেমে জীবনহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ বার কয়লা মাফিয়াদের অবৈধভাবে কয়লা তোলার দৌরাত্ম্যে বর্ষার আগে বিপাকে পড়ল সেচ দফতরও।

Advertisement

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেপরোয়া কয়লা উত্তলোনের জন্যই খয়ারাশোলের হিংলো জলাধার সংলগ্ন সেচখালের মধ্যেই এ বার ধস নেমেছে। গাংপুর গ্রামের কাছে সেচ খালের মধ্যে বিশাল মাপের ধসই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সেচদফতরের কর্তাদের মাথায়। ১৫০ ট্রাক্টর মাটি ফেলে আপাতত গর্ত বোঝাই করলেও সেটা যে স্থায়ী সমাধান নয় বুঝেছেন সেচকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, বর্ষায় সময় এমন চোরা খাদ সেচখালের গতিপথ বদলে দিতে পারে। বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতি হতে পারে জলাধারের।

ইতিমধ্যেই সেচদফতরের পক্ষে এসডিও হিংলো, সেচ সাধন গঙ্গোপাধ্যায় লোকপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করছেন। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘অবৈধভাবে কয়লা তোলা আটকাতে পুলিশ ততপর। ওখানে ঠিক কী ঘটেছে আমি অবশ্যই দেখব।’’

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছে?

সেচদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার সেচ ব্যবস্থা উন্নত করতে ১৯৭৬ সালে হিংলো নদীর গতিপথে নির্মিত হয় বাঁধটি। হিংলোর ওই জলাধার ঘেঁষেই, গাংপুর ভাদুলিয়া সগড়ভাঙার বিস্তীর্ণ এলাকায় মাটির কয়লা রয়েছে। এবং বহুকাল ধরেই এলাকায় বেআইনি কয়লা উত্তোলন চলে। ফলের মাটির নীচে বড় বড় খাদ তৈরি হয়েছে। সেচ দফতর জানিয়েছে, কয়লা কাটতে কাটতে কয়লা মাফিয়ারা বাঁধ থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সেচ খালের নীচ পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর সেই কারণেই সম্প্রতি গাংপুরের কাছে সেচখালের বেডে বড় বড় গর্ত লক্ষ্য করে সেচ কর্তারা। যা রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের। সেচ বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস রায় বলছেন, ‘‘বিষয়টি চিন্তার। হিংলো জলাধারের একদিকে বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে মাটির নীচে কয়লা রয়েছে। অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলনের জন্য মাটির নীচে কতটা গভীর খাদ কতটা পর্যন্ত বিস্তৃত বলা সম্ভয় নয়। তাই এমন কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।’’

এসডিও হিংলো সেচ, সাধনবাবু বলছেন, ‘‘সম্প্রতি নজরে আসে মূল সেচ ক্যানালের মধ্যে বিশাল বিশাল গর্ত। বিষয়টি নজরে আসতেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসি। উপরতলার নির্দেশ মাটি দিয়ে গর্ত বোঝাতে গিয়ে দেখি যত মাটি ঢালছি তা তলিয়ে যাচ্ছে গর্তে। বুঝতে অসুবিধা হয়নি বেআইনিভাবে কয়লা তোলার জন্যই এমন হয়েছে। আপাতত মাটি ভারাট করলেও যে কোনও মুহূর্তে ফের তলিয়ে যেতে পারে মাটি। বিশেষ করে বর্ষায় জল ছাড়া হলে। তখন কী ধরণের বিপদ অপেক্ষা করে আছে বলা শক্ত।’’

প্রসঙ্গত খয়রাশোলের কাঁকরতলা এবং লোকপুর এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ কয়লা খাদান রয়েছে। যেগুলি থেকে নিয়মিত কয়লা ওঠে বলে জানাচ্ছেন এলাকার মানুষ। কাঁকরতলার পারশুণ্ডি এবং লোকপুরের সগরভাঙা এলাকায় এমন খাদানের দখলদারি নিয়ে নিত্য লড়াই চলে। বছর তিনেক আগে অবৈধ খাদানে কয়লা তুলতে নেমে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পারশুণ্ডী এলাকায় রাস্তায় ধস নেমছে। তারপরও ছেদ পড়েনি কয়লা তোলায়।

খাদের জল জয়ে যায় বলে ছেদ পড়ে বর্ষার কযেকটা মাস। এলাকাবাসী মানছেন, লাভের অঙ্কটা যেহেতু বিশাল, তাই নিয়মিত কয়লা তোলায় মদত থাকে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের। সেই লোভের কারণে এ বার বিপন্ন সেচখালও। সেচকর্তাদের আর্জি, পুলিশ নজরদারি বাড়াক। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বেআইনি কয়লা খাদান থেকে কয়লা তোলা বন্ধ। অনেক আগে কয়লা তোলার জন্য এমনটা হয়ে থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement