আহত ছাত্র। নিজস্ব চিত্র
বসন্ত উৎসবের পরিবর্তে এ বার বিশ্বভারতীতে পালিত হল বসন্ত বন্দনা। তবে, সেই অনুষ্ঠানেও এড়ানো গেল না বিশৃঙ্খলা। নির্দেশ অমান্য করে গৌড় প্রাঙ্গণে আবির খেলা নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসা ও ধস্তাধস্তি হল পড়ুয়াদের একাংশের। মারধরের অভিযোগও উঠেছে এক পড়ুয়াকে। বিশ্বভারতী অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেছেন, আবির খেলার নামে ‘অসভ্যতা’ হয়েছে। তিনি তা সমর্থন করেন না। পাশাপাশি এ বারের অনুষ্ঠান থেকে ব্রাত্য রইলেন প্রাক্তনী, আশ্রমিকেরা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বসন্ত উৎসব হবে না, তার পরিবর্তে বসন্ত-বন্দনা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কয়েক দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী। বসন্ত-বন্দনা বিশ্বভারতী ঘরোয়া ভাবে পালন করবে এবং সর্বসাধারণের প্রবেশ সেখানে নেই বলেও উপাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোকসংস্কৃতি উৎসব ও রাতে বৈতালিকের মধ্য দিয়ে বসন্ত বন্দনার সূচনা হয়। শুক্রবার ভোরে বৈতালিক, শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে বসন্ত বন্দনা পালিত হয়। সেই অনুষ্ঠান দেখতে এ দিন সকালে বহু মানুষ ভিড় জমান। প্রথমে তাঁদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই নিয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে বচসা বাধে নিরাপত্তারক্ষীদের। যদিও পরে তাঁদের ভিতর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
বসন্ত উৎসব অর্থাৎ দোলের দিন আবির খেলার রীতি রয়েছে শান্তিনিকেতনে। কিন্তু এ দিন বসন্ত বন্দনা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই আবির খেলায় মেতে ওঠেন কিছু পড়ুয়া ও বাইরে থেকে আসা কয়েক জন। তা দেখে চটে যান উপাচার্য। নিরাপত্তারক্ষীদের আবির খেলা বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি।নিরাপত্তারক্ষীরা পড়ুয়াদের আবির খেলতে বাধা দিতে গেলে ফের এক প্রস্ত ঝামেলা বাধে। ধস্তাধস্তিও হয়। এক ছাত্র কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অন্য ছাত্রছাত্রীরাও। তবে, বসন্ত বন্দনা শেষ হওয়ার আগেই একটা অংশের এ ভাবে আবির খেলায় মাতা নিয়েও কিছু মহলে সমালোচনাশুরু হয়েছে।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা। ভিতরে মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’ পরে উপাচার্য অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ওই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, “আমরা বীরভূমে কিছু বিধ্বংসী খেলা দেখছিলাম। সেই খেলা থেকে বীরভূম জেলাকে মুক্ত করার জন্য এবং বাঙালিকে অন্য ভাবে চেতনা দেওয়ার জন্য এই বসন্ত বন্দনা আমরা শুরু করেছি। বসন্ত বন্দনা মানে এই নয় যে, আবির খেলার নাম করে অসভ্যতা করা। আমরা সেটা আজকেও দেখেছি। সেই অসভ্যতাটা কিন্তু আমার খুব একটা ভাল লাগেনি।’’ তাঁর মতে, ‘‘রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন ঋতুরাজ বসন্তকে বন্দনা করা। সেই জন্যই আমরা বসন্ত উৎসব, যেটা পরবর্তী কালে বসন্ত তাণ্ডবে পরিণত হয়েছিল, তার থেকে বাঁচার জন্য বসন্ত বন্দনার আয়োজন করেছি।”
তবে, প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের এমন অনুষ্ঠান থেকে ব্রাত্য রাখায় উপাচার্যেরও সমালোচনা হয়েছে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “ওঁর কাছে আশ্রমিকরা এখন অচ্ছুৎ হয়ে গিয়েছেন। তাই তাঁদের এখন সব কিছু থেকে বাদ রাখা হয়। বসন্ত বন্দনা থেকেও দূরে রাখা হয়েছে। আমরা এত দিন জানতাম বসন্ত উৎসবের দিনে আবির খেলা হত, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই যেন সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে।” আর এক আশ্রমিক তথা প্রাক্তনী স্বপন কুমার ঘোষের কথায়, “বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা শুরু থেকেই বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ বরাবর ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মী-আশ্রমিকদের যুক্ত করতে চাইতেন। ইদানীং নিত্যনতুন প্রথা চালু হচ্ছে। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক আমাদের কাছে।”