পুরুলিয়া শহর লাগোয়া শিমুলিয়ায় কংসাবতীতে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
মকর সংক্রান্তিতে পুরুলিয়া জেলার সব পা যেন মিলল মেলায়। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কংসাবতী, কুমারী, শিলাবতী, টটকো, নেংসাই ও দ্বারকেশ্বরের পাড়ে টুসু পরবের মেলায় ভিড় উপচে পড়ল। তবে মেলায় অধিকাংশকে মাস্ক ব্যবহার করতে না দেখায়, ভিড়ে দূরত্ব বিধি উধাও হওয়ায়, করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা উদ্বেগ রয়ে গেল।
এ দিন পুরুলিয়া শহরের কাছে কংসাবতী নদীর তীরে এবং সেতুর উপরে ভিড়ে ছয়লাপ ছিল। সেতুর তলায় দেউলবেড়া দশ গ্রাম কমিটির উদ্যোগে টুসু গানের প্রতিযোগিতা ছিল। ভিড়ে নজর টেনেছে পুরুলিয়ার তেলেডি, হুড়ার ফুটিয়ারি জলাধার, কোটশিলার মুরগুমা জলাধার, কাশীপুরের রঞ্জনডি ও জোড়সা জলাধার প্রভৃতি জায়গা।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদা থানার তুলিন সীমানায় সুবর্ণরেখা নদীর পাড়ে ও জয়পুরে কংসাবতী নদীর পাড়ে দেউলঘাটায় এ দিন উল্লেখযোগ্য ভিড় ছিল। ভিড়ে পিছিয়ে ছিল না টটকো নদীর উপর বান্দোয়ানের যমুনা সেতু এবং দুয়ারসিনিও।
মকর সংক্রান্তির দিন থেকে পুঞ্চা ও হুড়া থানার সীমানায় শিলাবতী নদীর উৎসস্থলে শুরু হয় এক সপ্তাহের শিলাবতী মেলা। বৃহস্পতিবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মেয়াদে শুরু হলেও মেলা ভাঙতে আরও কয়েক দিন গড়িয়ে যায়।
সুবর্ণরেখা নদীর পাড়ে মেলায় হাজির থাকা ঝালদার বাসিন্দা দেবশরণ কর্মকার বলেন, ‘‘মকরের মেলা বলে কথা। ভিড়ের মাঝে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। তাই ফি বছর আসি।’’
এদিন একটু বেলার দিকে কংসাবতী নদীতে মস্ত চৌডোল নিয়ে দেউলঘাটার বাসিন্দা অঞ্জনা মাহাতো, বেলারানি মাহাতোরা হাজির হন। তাঁদের কথায়, ‘‘ভিড়ের চাপে চৌডোল ভাসানোর জায়গা পাচ্ছি না।’’ বিভিন্ন মেলায় ঝাড়খণ্ডের বোকারো, চাষ, ধানবাদ জেলা থেকে অনেকেই পুরুলিয়া জেলায় এসেছিলেন।
জয়পুর ও আড়শা থানার সীমানায় দেউলঘাটায় টুসু পরবের মেলার ভিড় দুই থানার পুলিশ কর্মীরা সামলান। পুলিশের দাবি, ভিড় সামাল দিতে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ ও সিভিক কর্মী ছিল। মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় দুয়ারসিনি সেতুতেও মেলার ভিড় আছড়ে পড়েছিল। তার ফলে যানবাহন ধীর গতিতে যাতায়াত করেছে। মানবাজার ও বোরো থানার পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণে ছিল। মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো ওই মেলায় গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘টুসু পরব আমাদের প্রাণের উৎসব। এ দিনের মেলায় আসা মানুষের ভিড়, সে কথাই প্রমাণ করছে।’’