জিতেন্দ্রনাথ হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র
এক শিশুকে নিয়ে এসে বাড়িতে রাখা, তাকে শিশু শ্রমিক হিসেবে খাটানো ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ছাতনার হেতাশুড়া গ্রামের বাসিন্দা জীতেন্দ্রনাথ হেমব্রমের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের তরফে ছাতনা থানায় জীতেন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রী চন্দনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, ‘‘সোম (নির্যাতিত বালক) আমাদের জানিয়েছে জীতেন্দ্রনাথের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীও তার উপরে অত্যাচার চালাতেন। তাই দু’জনের বিরুদ্ধেই আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।’’
শিবরাত্রিতে জিতেন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশের গ্রামের এক জনের বাড়িতে আশ্রয় পায় সোম হেমব্রম নামে বছর এগারো-বারোর ওই বালক। সেই আশ্রয়দাতা দুলাল টুডুই সোমকে নিয়ে যান ছাতনা পুলিশের কাছে। বাচ্চা ছেলেটির মুখ থেকেই পুলিশ ও চাইল্ড লাইন নির্যাতনের বিবরণ শোনে।
আপাতত বিষ্ণুপুরের সুমঙ্গলম হোমে রয়েছে ওই ছেলেটি। বাঁকুড়ার শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান মহিনুর আলম জানান, এখনও আতঙ্ক কাটেনি সোমের। এ দিন তিনি ছেলেটির সঙ্গে কথাও বলেছেন।
মহিনুর আলম বলেন, ‘‘ও বারবার বলছে, যাতে ওকে কোনও ভাবেই আর হেতাশুড়ায় ফিরিয়ে না দেওয়া হয়। আমরা ওর ভয় কাটানোর চেষ্টা করছি। স্কুলে ভর্তি হতে চেয়েছে সোম। সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের রামকানালি এলাকায় একটি আদিবাসী ছাত্রাবাস চালান জিতেন্দ্রনাথ। লাগোয়া নিতুড়িয়া ব্লকের গোবাগে চালান একটি কোচিং সেন্টার। জিতেন্দ্রনাথ দাবি করেছেন, ২০০৯ সালে রঘুনাথপুরের রামকানালি স্টেশন থেকে সোমকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তিনি। তখন সোম ছিল বছর তিনেকের শিশু। সোম নাম তাঁরই দেওয়া বলে জানিয়েছেন জিতেন্দ্রনাথ।
তবে, আদৌ তিনি সোমকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, নাকি অন্য ভাবে শিশুটিকে আনা হয়েছিল, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশ মহলে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ওই শিশু-নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, চাইল্ড লাইনের কাছে অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযুক্ত দম্পতির খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।