অমর্ত্য সেনের বাসভবন প্রতীচীতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
বীরভূম জেলা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বিশ্বভারতী। বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ীর জমি মামলা প্রসঙ্গে এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই রায়কে একযোগে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, বর্তমান শিক্ষক থেকে শুরু করে আশ্রমিকদের একটি বড় অংশ।
তবে, অমর্ত্য সেনকে দেওয়া বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের বিরুদ্ধে ‘প্রতীচী’ বাড়ির সামনে যে ধর্না-অবস্থানআন্দোলন শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার থেকে, তা চলবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই আবহে নোবেলজয়ীর বাড়ির নিরাপত্তাও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া না-দিলেও আইনশৃঙ্খলার ‘অবনতি’র আশঙ্কা করে তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে সম্প্রতি বীরভূম জেলা জজ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নোবেলজয়ীর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী সহ আরও কয়েক জন আইনজীবী। জেলা আদালত সেই মামলার পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য করেছে ১৫ মে। কিন্তু, বিশ্বভারতীর নোটিস অনুযায়ী প্রতীচী বাড়ির ‘বিতর্কিত’ ১৩ ডেসিমাল জমি খালি করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৬ মে। অর্থাৎ, শনিবার। সে জন্য স্থগিতাদেশ চেয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে আপিল মোকদ্দমা করেন নোবেলজয়ীর আইনজীবীরা। তারই প্রেক্ষিতে এ দিন ওই নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ১০ মে দুপুর দুটোয় জেলা আদালতে এই সংক্রান্ত মামলাটি শুনানির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘এটা হওয়াই উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। উপাচার্য কোনও দিন ওই জমি নিতে পারবেন না।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “এই রায় খুবই যথাযথ। এতে অমর্ত্য সেন অনেকটাই স্বস্তি পেলেন।” প্রতীচী বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্ব থাকা গীতিকন্ঠ মজুমদার বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বিশ্বভারতীর কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তা না দেওয়ায় আদালতে যেতে হয়। এই রায়ে আমরা খুবই খুশি। তবে একজন বিশ্ববরেণ্য মানুষের প্রতি উপাচার্যের আরও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত ছিল।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি-বিতর্কে অমর্ত্যের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বারবার। বুধবার মালদহ সফরে যাওয়ার পথে বোলপুর স্টেশনে দলের নেতাকর্মীদের বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ-নোটিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ৬ ও ৭ মে অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার নির্দেশ দেন। সেই প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল থেকেই প্রতীচী বাড়ির সামনে ৬০-৭০ জন বাউল শিল্পীদের পাশাপাশি অনেক বিশিষ্টজনও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসবেন। সেখানে গান-বাজনার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে। ওই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকার কথা কবীর সুমন, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, গৌতম ঘোষের। থাকবেন বিশ্বভারতীর শিক্ষক, প্রাক্তনীদের অনেকে। ‘সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি’র তরফেও আজ, শুক্রবার অমর্ত্যকে অপমানের প্রতিবাদে প্রতীচী বাড়ির সামনে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।