পড়ুয়া: পছন্দের বইয়ের খোঁজ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতনে শেষ হয়েছে পৌষ উৎসব। সোমবার থেকে বোলপুরে শুরু হল বই উৎসব। বোলপুরে ‘বারো মাসে তেরো পার্বণের’ তালিকায় জুড়লো তা।
বীরভূম জেলা বইমেলা হয় প্রতি বছরই। কিন্তু বোলপুর শহরে তা প্রতি বছর হয় না। এক বছর জেলা বইমেলা হয়ে যাওয়ার পর সিউড়ি, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া ঘুরে তিন বছর পর মেলা ফেরে বোলপুরে। অন্য শহরগুলির ক্ষেত্রেও একই ভাবে তিন বছর পর পর বইমেলা হয়।
এ বছর বীরভূম জেলা বইমেলা রামপুরহাটে শেষ হয়েছে। বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আরও ভাল করতে, বিশেষ করে বাচ্চাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে এ বছর থেকে বোলপুরে বই উৎসবের সূচনা করা হলো। এমনই জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। মেলা চলবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি দিনই সাংস্কৃতিক ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে বোলপুর বই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউরি, মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা, সত্যেন রায়। বই উৎসব উপলক্ষে ‘স্মরণিকা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়।
বই উৎসবের উদ্বোধক অমিত্রসূদনবাবু বলেন, ‘‘বছরের প্রথম দিনেই বইমেলায় উপস্থিত হতে পারা সবার কাছেই এক অন্যরকম অনুভূতি। রবীন্দ্র জীবনস্মৃতিতে বারবার বোলপুরের নাম উঠে এসেছে। তাই বোলপুরে এই মেলা বিশেষ তাৎপর্যের দাবি রাখে।’’ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা বলেন, ‘‘বই এমন একটা জিনিস যার প্রতি আকর্ষণ কোনওদিন শেষ হয় না। বই কিনুন, উপহার দিন। অভিভাবকরা বই পড়ুন, তা দেখে বাচ্চারা শিখবে।’’
প্রথম বছরে বোলপুর বই উৎসবে মোট ৩৬টি স্টল এসেছে। স্টল মালিকদের থেকে নেওয়া ভাড়াতেই চলছে বইমেলার যাবতীয় খরচ। কলকাতা, বর্ধমানের পাহাড়হাটি, মেমারি থেকেও এসেছেন বই বিক্রেতারা।
বোলপুর বই উৎসব কমিটির অরূপ ভট্টাচার্য, অপরূপ দলুই জানান— বোলপুরে সব মেলাই হয়। বইমেলা প্রতি বছর হয় না। এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বইমেলা হওয়ার খুব প্রয়োজন। সে জন্যই এই উদ্যোগ।
বোলপুরে বই উৎসবের আয়োজনে খুশি বইপ্রেমীরা। উদ্বোধনের পর থেকেই তাঁরা আসতে শুরু করেছেন। স্কুল ও কলেজের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল— কেউ বাদ যাননি। তাঁদের সবার একটাই কথা— কলকাতার প্রথম বইমেলাও এ ভাবেই শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বিস্তার লাভ করেছে। বোলপুরে জেলা বইমেলা তিন বছর পর পর হয়। ইচ্ছা থাকলেও কলকাতার বইমেলায় সব সময় যাওয়া সম্ভব হয় না। বোলপুরে বই উৎসবের এই উদ্যোগে খুশি তাঁরা। বরং এত দিন কেন কেউ বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি তা নিয়েই কথা চলছে শহরজুড়ে। পৌষ উৎসবের পর বই উৎসবে কার্যত মেতে উঠেছেন বোলপুরবাসী।