পুলিশি বাধার মুখে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ার কোতুলপুর যাওয়ার পথে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে কালো পতাকা দেখানো হল। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। সোমবার বিকালে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার বালিঠা গ্রামে আত্মঘাতী কৃষক তাপস কোটালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল শুভেন্দুর। কিন্তু বালিঠা যাওয়ার কিছুটা আগেই জলিঠা মোড়ে শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখায় তৃণমূল। এর পর শুভেন্দুর কনভয়ও আটকে দেয় পুলিশ। তার জেরে গন্তব্যে না পৌঁছেই ফিরে আসতে হয় শুভেন্দুকে। বাধা পেয়ে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গণেশ বিশ্বাসকে ‘দেখে নেওয়া’ র হুমকি দেন তিনি। পাল্টা তৃণমূলের উপ মুখ্য সচেতক ও মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা যেন মনে রাখেন, কোনও সরকারি আধিকারিককে এই ধরনের হুমকি দেওয়া হলে প্রশাসনও তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে।’’
সোমবার কোতুলপুর থানার জলিঠা মোড়ে শুভেন্দুর কনভয় পৌঁছতেই তাঁকে কালো পতাকা দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। এর পাশাপাশি শুভেন্দুকে আটকাতে আগে থেকেই ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। জলিঠা মোড় থেকে বালিঠা যাওয়ার রাস্তায় কিছু দূর অন্তর গার্ড রেল এবং বাঁশ দিয়ে একাধিক ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। মোতায়েন ছিল পুলিশও। বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ শুভেন্দু জলিঠা মোড়ে হাজির হতেই পুলিশ কনভয়কে আটকে দেয়। শুভেন্দু গাড়ি থেকে নেমে বলেন, ‘‘এখানে কে আছেন পুলিশের দায়িত্বে? কেন আপনি আমার পথ আটকেছেন? আপনার কাছে ১৪৪ ধারা জারির আদেশ আছে? এটা ভারত। এটা কি পাকিস্তান? এটা করাচি? আমি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আমাকে আটকানোর কোনও অধিকার আপনাদের নেই। গণতন্ত্রকে পুলিশ হত্যা করছে। যে কৃষক আত্মহত্যা করেছে তার বাড়িতে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে এরা আটকে দিচ্ছে। এরা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাবা, মা পড়াশোনা করিয়েছেন, আমাদের করের টাকায় এদের বেতন হয় অথচ এদের কোনও লজ্জা নেই। আপনাদের বেতন কী তৃণমূল দেয়?’’
শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব। কোনও নথি বা আদেশ ছাড়াই আমাকে আটকানো হয়েছে শুধুমাত্র তৃণমূলের নির্দেশে।’’ জলিঠা মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে শুভেন্দুর হুমকি, ‘‘আপনাকেও আদালতে নিয়ে যাব। আমাকে আপনি চেনেন না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো লোক। তিন বার সাংসদ এবং তিন বার বিধায়ক হয়েছি। আমি ২০১১ সালের আগে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএমকে সোজা করেছি। আপনার বয়স কম। মনে রাখবেন বিজেপির অধীনে আপনাকে চাকরি করতে হবে।’’
গত ১০ ডিসেম্বর বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার বালিঠা গ্রামে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার করেন তাপস কোটাল নামে এক কৃষক। এই পরিস্থিতিতে রবিবার মৃত কৃষকের স্ত্রী চিন্তা কোটাল তৃণমূলের কোতুলপুর ব্লক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দেন। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক জলঘোলা।
সোমবারই চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধান্যঝাটি গ্রামে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী কৃষক ভোলানাথ বায়েনের বাড়িতে যান শুভেন্দু। ভোলানাথের স্ত্রী মিঠু বায়েনের হাতে দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন বিরোধী দলনেতা। এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাড়া বলেন, ‘‘আত্মহত্যার কথা শুনে ওই কৃষকের বাড়িতে গিয়েছিল প্রশাসনও। পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। তাঁদের কী কী সরকারি সুবিধার আওতায় আনা যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য বিরোধী দলনেতা এলেও কোনও লাভ হবে না।’’