তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রচারে তুলবে বিজেপি

ঘরোয়া কোন্দল সামলাতে সামলাতে নাজেহাল শাসকদলকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই বিঁধবে বিজেপি। তাই পুরভোটের প্রচারে নেমে সাধারণ মানুষের কাছে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই ভোট চাইবেন পদ্মফুলের প্রার্থীরা। রবিবার দলের নির্বাচনী কৌশল নির্ণয়ের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাঁকুড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক বলেন, “প্রার্থী বাছাই পর্বেই যদি এত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তা হলে পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের অশান্তি কোন পর্যায়ে যাবে, তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না!’’

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০১:১৯
Share:

ভোটের অজুহাতে রাস্তাতেও প্রচার বিজেপি-র। অভিযোগ নিবার্চনী বিধি-ভঙ্গের। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর বাইপাসে ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

ঘরোয়া কোন্দল সামলাতে সামলাতে নাজেহাল শাসকদলকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই বিঁধবে বিজেপি। তাই পুরভোটের প্রচারে নেমে সাধারণ মানুষের কাছে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই ভোট চাইবেন পদ্মফুলের প্রার্থীরা। রবিবার দলের নির্বাচনী কৌশল নির্ণয়ের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাঁকুড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক বলেন, “প্রার্থী বাছাই পর্বেই যদি এত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তা হলে পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের অশান্তি কোন পর্যায়ে যাবে, তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না! তাই প্রচারে বেরিয়ে সাধারণ মানুষকে আমরা বোঝাব, তৃণমূল প্রার্থীরা জিতলে এলাকায় এলাকায় ঝামেলা বাধবে ওদেরই গোষ্ঠীর মধ্যে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, পুরভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে রাজ্যের আরও অনেক জেলার মতো বাঁকুড়াতেও শাসক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। টিকিট কে পাবেন বা পাবেন না, তা নিয়ে শাসকদলের বহু নেতা-নেত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যেরও সৃষ্টি হয়। অনেকেই দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় নির্দল হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে পড়েন। দলীয় চাপে কয়েক জন পরবর্তীকালে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও সবাইকে সরাতে পারেনি তৃণমূল। যেমন বাঁকুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর রেখা দাস রজককে দল ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করেছিল। কিন্তু নিজের গড় ছেড়ে যেতে নারাজ রেখাদেবী দলীয় টিকিট না নিয়ে নির্দল হয়েই ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী শান্তি সিংহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। আবার প্রচারে নেমে একাধিক তৃণমূল প্রার্থী নিজেকে হবু পুর-চেয়ারম্যান হিসেবেও এলাকাবাসীদের কাছে তুলে ধরছেন। যার ফলে ভোটে জেতার পরে পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরেও শাসক দলে দ্বন্দ্ব বাধতে চলেছে বলে মনে করছেন জেলার বিজেপি নেতারা।

প্রচারে এই বিষয়টিকে সামনে আনার পাশাপাশি বিদায়ী পুরবোর্ডে শাসক দলের কাউন্সিলরদের দ্বন্দ্বের কথাও মানুষের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলেরই উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার। শম্পাদেবী আস্থা ভোটাভুটিতে হেরেও যান। কিন্তু, দলের মধ্যস্থতায় নিজের আসন শেষ পর্যন্ত ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। তবে, তার মাঝে বেশ কয়েক মাস চেয়ারম্যান বলে কেউই ছিল না বাঁকুড়া পুরসভায়। সেই সময় ব্যপক ভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল পুর-পরিষেবা। পরে পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (সিআইসি) গড়া হয়নি এই পুরসভায়। ফলে বাঁকুড়া পুর-এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। অনেকেই ‘অসম উন্নয়নের’ অভিযোগ তুলেছেন পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতা অজয়বাবু বলেন, “দলীয় দ্বন্দ্বের জেরে এই পুরসভায় পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বারবার। পুর-এলাকার বাসিন্দারাই এর সাক্ষী রয়েছেন। আমরা শুধু ওই ঘটনাগুলিকে তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই।’’

Advertisement

যদিও শম্পাদেবী উন্নয়নের প্রশ্নে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপি-র উদ্দেশে। তাঁর কথায়, “কেউ যদি উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাহলে তা প্রমাণ করে দিক। পাঁচ বছর আগে এই বাঁকুড়া শহর কেমন ছিল, আর এখন কেমন হয়েছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বিগত পাঁচ বছরে শহরটাকে আমরা সাজিয়েছি। পুরপরিষেবা নিয়ে কোনও নাগরিক আমার কাছে প্রশ্ন তোলেননি।”

গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া পুরসভায় সামগ্রিক ভাবে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। বাঁকুড়ার ১, ৫, ১৮ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে প্রথম স্থানে ছিল এই দল। এ ছাড়াও ১৬টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। তুলনায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল বামেদের ভোট। তাই আসন্ন পুরভোটে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র জোর টক্কর হবে বলেই আশা করেছিল রাজনৈতিক মহল। লোকসভা ভোটের পরে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে শাসকদলের বিরুদ্ধে আন্দোলনও গড়ে তুলতে দেখা গেছে বিজেপিকে। তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে বামেরা। এই পরিস্থিতিতে পুরভোটের ফলাফলে বিজেপি কতটা নজর কাড়তে পারে, তা দেখতে কৌতূহল রয়েছে নানা মহলে। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও নতুনদের প্রাধান্য দিয়েছে বিজেপি। প্রার্থীদের গড় বয়স চল্লিশের নীচে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে এক জন করে দলীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে বিজেপি-র তরফে। ওই পর্যবেক্ষকেরা প্রার্থীদের প্রচারের ছায়াসঙ্গী।

অজয়বাবু বলেন, “এই পুরভোট আমাদের কাছে মর্যাদা রক্ষার লড়াই। তাই জয়ের জন্য মরিয়া ভাবে ঝাঁপিয়েছি আমরা।’’ যদিও বিজেপিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ শাসকদল তৃণমূল। দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপিকে আমরা কোনও ফ্যাকটর বলেই ধরছি না! এই রাজ্যে ওই দল কোথাও জমি পাবে না। প্রচারে চমক এনে লোকসভা ভোটেও বাজিমাৎ করার স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু, খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে। এ বারও ওই পরিণতি হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement