গণপ্রহার: মনোনয়ন তুলতে গিয়ে রোষের মুখে বিজেপি নেতা। সোমবার রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র
রামপুরহাট ১ ব্লকের আয়াষ গ্রাম পঞ্চায়েত। বিডিও অফিসে স্বাধীনপুর সংসদের জন্য মনোনয়নপত্র তুলতে গিয়েছেন বিজেপির এক প্রার্থী। সঙ্গে দলের কয়েক জন নেতা-কর্মী। আচমকা মারমুখী এক দল লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকল বিডিও অফিসের সামনে। বিজেপির অভিযোগ, হানদাররা তৃণমূলের দুষ্কৃতী। বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিডিও অফিস থেকে বের করে শুরু হল চড়, ঘুষি, লাথি। মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয় এক মহিলা প্রার্থীকে। হেলমেট দিয়ে মারধর করা হয় বিরোধী দলের দুই নেতাকে। বিজেপির নালিশ, হামলার সময় নীরব দর্শক ছিল পুলিশ।
বিজেপির অভিযোগ, দলের জেলা সহ-সভাপতি নারায়ণ মণ্ডলকে রাস্তায় ফেলে প্রচণ্ড মেরে তাঁর হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয় মনোনয়নপত্র। সবার সামনেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেই কাগজ। তৃণমূল কর্মীদের হাতজোড় করে তাঁকে মারধর না করার আর্জি জানালেও থামেনি তা। বিডিও অফিস থেকে রামপুরহাট থানার ‘টাউনবাবু’ আব্দুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে বেরনোর চেষ্টা করেছিলেন বিজেপি নেতা অষ্টম মণ্ডল, অভয় রায়। অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা লাথি মেরে তাঁদের মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। তার পর চলে মারধর। হেলমেট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ রামপুরহাট ১ ব্লক অফিসে শাসক দলের ‘বাধায়’ আটকে থাকেন বৈধরা গ্রামের দলীয় কর্মী তাপস রায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।
জেলার বিজেপি নেতৃত্বের নালিশ, এ দিন রামপুরহাটে তৃণমূলের হামলায় দলের ৮ জন নেতা-কর্মী জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের জেলা সহ-সভাপতি নারায়ণ মণ্ডল, জেলা সাধারণ সম্পাদক অভয় রায়, রামপুরহাট ১ মণ্ডল কমিটির সভাপতি মুকুল মুখোপাধ্যায়, রামপুরহাট শহর সভাপতি নীলকন্ঠ বিশ্বাস, রামপুরহাট ১ ব্লক পর্যবেক্ষক অষ্টম মণ্ডল-সহ তিন জন বিজেপি কর্মী। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের মারধরে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তারাপীঠ থানার বুধিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য জহিরুল হক।
বিরোধী শিবিরের দাবি, রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লক ছাড়া নলহাটি ১ ব্লক, মুরারই ১ ব্লকেও বিরোধীদের মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দেয় তৃণমূল। সোমবার বিকেলে এই নিয়ে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘রামপুরহাট ১ ব্লকে আয়াষ পঞ্চায়েতের আকবর আলির নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করেছেন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘যতই বাধা দেওয়া হোক, বিজেপি প্রার্থীরা রামপুরহাট ১ ব্লকের সব জায়গায় মনোনয়ন জমা দেবেই।’’
মনোনয়নপত্র নিতে বাধা, দলীয় কর্মীদের মারধরে তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে এসইউসিআই-ও। দলের জেলা কমিটির সদস্য আয়েষা খাতুনের অভিযোগ, রামপুরহাট এসডিও অফিসে দলের প্রার্থীরা। তাঁদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর নালিশ, ওই অফিস চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও শতাধিক তৃণমূলকর্মী সেখানে ছিলেন। এসইউসিআই নেতা-কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। রামপুরহাট ২ ব্লকে ওই দলের এক কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদ নির্বিঘ্নে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র রক্ষা করার দাবিতে সোমবার জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর দ্বারস্থ হন।
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে রামপুরহাট মহকুমার ১৮টি আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রথম দিন একটিও মনোনয়ন জমা পড়েনি।
এ সমস্ত অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূলের রামপুরহাট ১ ব্লকের সভাপতি আনারুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনার কথা আমার জানা নেই। ওঁদের নিজেদের মধ্যে মনে হয় কিছু হয়েছে।’’ তবে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, তৃণমূলের ওই নেতাকে এ দিন সকাল থেকে অনেক বারই রামপুরহাট ১ ব্লক প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে, রামপুরহাট থানার আয়াষ পঞ্চায়েতের সদস্য এবং এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা আকবর আলি বলেন, ‘‘আমি কেন মারধর করতে বলব! আমি কত বার ওঁদের বাঁচিয়েছি সেটা বিজেপির নেতারাই বলবেন।’’