জেলা সভাপতির সঙ্গে দুলাল। সিউড়ি জেলগেটের সামনে। নিজস্ব চিত্র।
লোবায় বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই দলেরই বুথ সভাপতি দুলাল ডোমকে। ৮৪ দিনের মাথায়, শুক্রবার সিউড়ি আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষ জামিন পেলেন তিনি। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে দুলালবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার পক্ষে কোনও তথ্য-প্রমাণই দিতে পারেনি জেলা পুলিশ। চার্জশিটও দিতে পারেনি। তাই বিচারক তাঁর মক্কেলকে জামিন দিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েতের ফকিরবেরা গ্রামের ডোমপাড়ার বাসিন্দা তথা বিজেপি-র স্থানীয় বুথ সম্পাদক পতিহার ডোমের দেহ উদ্ধার হয় গ্রাম লাগোয়া কাঁটাগড়ে নামে একটি পুকুরের পাড়ে।
বিজেপি-র অভিযোগ ছিল, তড়িঘড়ি পুলিশ দেহ তুলে আনতে চেষ্টা করেছে। এরই সঙ্গে ওই খুনের অভিযোগে দলের বুথ সভাপতি দুলালবাবুকেই দলীয় কর্মী খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। দেহ উদ্ধারকে ঘিরে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। আহত হন দুই পুলিশকর্মী।
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ওই খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ সে-ভাবে এগোতেই পারেনি। কে বা কারা খুন করল, সেটাও অস্পষ্ট। পুলিশের অবশ্য দাবি ছিল, নিহতের স্ত্রী জয়শ্রী ডোমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই দুলাল ডোমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ নিহতের স্ত্রী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, বুথ সভাপতিই তাঁর স্বামীকে ঘর থেকে ফোনে ডেকেছিলেন। অন্য দিকে, বিজেপি-র অভিযোগ, শাসকদলের চাপে নিহতের স্ত্রীকে দিয়ে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করানো হয়েছিল।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘গ্রেফতারের পরে দুলাল ডোমকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিহত পতিহারকে আমার মক্কেলই ফোনে বা সশরীরে এসে ডেকে নিয়ে গিয়েছেন, এর পক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ বা কল রেকর্ড— কিচ্ছু দিতে পারেনি পুলিশ।’’ শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্তি পেয়ে দুলালবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আদালতের বিচারের উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতির ধ্রুব সাহার দাবি, ‘‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল আমাদের দলের বুথ সভাপতিকে। আদতে পুলিশ কোনও তদন্তই করেনি বা করতে চায়নি। ওই খুনের ঘটনায় আর কেউ গ্রেফতারও হয়নি। আমরা চাই প্রকৃত খুনি চিহ্নিত হোক এবং সাজা পাক।’’ পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে।
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পুলিশ নিজের কাজ করছে। বাকিটা ঠিক সামনে আসবে। যে বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে।’’