বিজেপি নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র
মানবাজারের কানহোর মূর্তি ভাঙা কাণ্ডে যুক্ত অভিযোগে বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা নিয়ে সরগরম পুরুলিয়ার রাজনীতি। তারই মধ্যে সোমবার রাতে বলরামপুরে ভাঙল রামের মূর্তি। এ বার ওই ঘটনায় দোষীদের ধরার দাবিতে সুর চড়িয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘বলরামপুরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা শুরু করা হয়েছে। মানবাজার ও বলরামপুর দু’টি ঘটনারই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় এফসিআই-এর গুদামের কাছে বছর তিনেক আগে তৈরি করা হয়েছিল রামের সিমেন্টের মূর্তি। চার পাশ খোলা, টিনের ছাউনির নীচে মূর্তিটি ছিল। দু’বেলা পুজো-আরতি হয়ে আসছিল। মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, সে মূর্তি ভেঙে পড়ে রয়েছে। বাসিন্দারা ভিড় করেন। পুলিশ যায়।
বিজেপির বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা বজরং দলের নেতা বিরিঞ্চি কুমার বলেন, ‘‘স্থানীয় এক মহিলা মঙ্গলবার ভোরে সাফসুতরো করতে গিয়ে দেখেন, রামের মূর্তি মাটিতে পড়ে। যারা এমন কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। দু’দিনের মধ্যে দোষীদের খুঁজে পাওয়া না গেলে, আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘যে কোনও মূর্তি ভাঙাই অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই সংস্কৃতি এ রাজ্যে বিজেপিই আমদানি করেছে। তৃণমূল এমন মনোভাব সমর্থন করে না। দোষীদের কড়া শাস্তি দরকার। পুলিশকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’
এ দিকে, মানবাজারের কাদলাগোড়া গ্রামে হুল দিবসের রাতে কানহোর মূর্তি ভাঙা কাণ্ডে ‘প্রকৃত দোষীদের’ গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ স্মারকলিপি দেওয়ার পরে এ দিন রাস্তায় নামে বিজেপি।
এ দিন মানবাজারের ইন্দকুড়ি থেকে এসডিপিও-র অফিস পর্যন্ত বিজেপির কয়েকশো কর্মী-সমর্থক মিছিল করেন। মিছিল থেকে কাদলাগোড়া মূর্তি ভাঙা কাণ্ডে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব’কে দায়ী করে স্লোগানও তোলা হয়। পরে এসডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়েছে।
মূর্তি ভাঙা কাণ্ডকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে নামার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূলের আদিবাসী শাখা। তারই মধ্যে সোমবার ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ ‘প্রকৃত অপরাধীরা বাইরে থেকে যাচ্ছে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করায় অন্য মাত্রা যোগ হয়।
ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম বলেন, ‘‘এ দিন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খবর নিয়ে জেনেছি, বছর তিনেক আগে কানহোর মূর্তি স্থাপন করা হলেও সেখানে ছবি লাগিয়ে কয়েক দশক আগে থেকেই হুল উৎসব পালন করা হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল চত্বরে চলে আসা উৎসবের স্থান এ বার পরিবর্তন করা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। কানহোর মূর্তি ভাঙার ঘটনা তৃণমূলের কোন্দলের জেরে হয়ে থাকতে পারে। উল্টে আমাদের এক কর্মীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।’’
যদিও কাদলাগোড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু এ দিনও দাবি করেন, ‘‘গ্রামে এক বৈঠকে বৈদ্যনাথ মান্ডি কানহোর মূর্তি ভাঙার কথা স্বীকার করেছিলেন। তারপরেই ‘সিধু কানু মেলা কমিটি’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এখানে তৃণমূলের নাম আসছে কোথা থেকে? আমরা নয়, বিজেপিই রাজনীতি করছে।’’ তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘কানহোর মূর্তি ভাঙার ঘটনা নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি শুরু করায় মানুষকে প্রকৃত ঘটনা জানাতে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে।’’