Birbhum

Mohammedbazar: খনি-তৎপরতা, জমি বেচাকেনা বন্ধ দশ মৌজায়

হরিণশিঙার গুরুপদ রাউত মেয়ের বিয়ের জন্য  নিশ্চিন্তপুর মৌজায় একফালি জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:১১
Share:

মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত খনি এলাকা নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও বাড়ল। বুধবার থেকেই মহম্মদবাজার ব্লকের ১০টি মৌজায় জমি কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেল বীরভূমের জেলাশাসকের নির্দেশে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেলেই জেলাশাসক বিধান রায় একটি নোটিস জারি করেছেন। সেখানে লেখা, মহম্মদবাজার ব্লকের হাটগাছা, মকদমপুর, বাহাদুরগঞ্জ, হরিণশিঙা, চাঁদা, সালুকা, দেওয়ানগঞ্জ, আলিনগর নিশ্চিন্তপুর, কবিলনগর মৌজার জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হল। মহম্মদবাজারের ডেউচা–পাঁচামি প্রস্তাবিত খনি এই দশটি মৌজার উপরেই গড়ে উঠার কথা। জেলাশাসক জানান, প্রস্তাবিত খনি এলাকায় কেউ যাতে প্রতারিত না হন, লোভ দেখিয়ে বা অনৈতিকভাবে কেউ যেন জমি কেনাবেচা না-করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২.২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে মোট ৩৪০০ একর জমির উপরে গড়ে উঠবে খনি। তবে সেটা ধাপে ধাপে। সেই জমির মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকাধীন বা রায়তি জমির পরিমাণ প্রায় ২৪০০ একর। হাজার পাঁচেক পরিবার এই খনির জন্য সরাসরি প্রভাবিত হবেন। কিন্তু, প্রশাসনের কাচে খবর আসে, খনি নিয়ে সরকারি প্যাকেজ ঘোষণা হতেই জমি নিয়ে ‘খেলা’ শুরু হয়ে গিয়েছে এলাকায়। জমির রেকর্ড ঠিক করার প্রক্রিয়া চললেও তাই কেনাবেচা বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ করল প্রশাসন।

Advertisement

যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে এলাকাবাসীর অনেকেই মনে করছেন, আরও একটু সময় দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ করলে ভাল হত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা কৃষিজমি বা অন্য গোত্রভুক্ত জমি কিনবেন বলে ইতিমধ্যেই বায়না দিয়েছিলেন। আবার অনেকে টাকা মিটিয়ে অন্যের থেকে জমি নিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন, অথচ নিজের নামে এখনও রেজিস্ট্রি করাতে পারেননি। এমনও কিছু বাসিন্দা রয়েছেন, বিশেষ প্রয়োজনে যাঁদের সামান্য কিছু পরিমাণ জমি বিক্রির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হওয়ায় এঁরা সকলেই বেকায়দায় পড়ে গেলেন।

হরিণশিঙার গুরুপদ রাউত মেয়ের বিয়ের জন্য নিশ্চিন্তপুর মৌজায় একফালি জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেটা আটকে গিয়েছে। হরিণশিঙার আর এক বাসিন্দা তাপস বাগদি বলছেন, ‘‘কিছুটা জমি কিনে একটি ঘর বানিয়েছি। খরচ বাঁচাতেই ধান ওঠার পরে ওই জমি রেজিস্ট্রি করার কথা ভেবেছিলাম। সেটা হল না।’’ হিংলো পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবদাস দাস বলেন, ‘‘সমস্যা নিয়ে কেউ কেউ আসছেন। তবে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশাসন নেবে।’’

ভাঁড়কাটা গ্রামে এক আদিবাসী প্রৌঢ় জানালেন, টন প্রতি টাকা দিতে হবে, এই শর্তে পাথর খাদান মালিককে বা অন্যত্র বেশি জমি নিয়ে ক্রাশার মালিককে নিজেদের জমি ব্যবহার করতে দিয়েছেন আদিবাসীরা। কিন্তু, কয়লা খনির জন্য ক্ষতিপূরণের কথা মাথায় রেখে অনেকেই চাইছিলেন জমিগুলি নিজেদের দখলে নিতে বা রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে। সে ইচ্ছাও ধাক্কা খেল। জেলাশাসকের যদিও আশ্বাস, ‘‘এমন কেউ যদি থেকে থাকেন, যিনি বিশেষ প্রয়োজনে জমি রেজিস্ট্রি করাতে চাইছেন, তিনি আবেদন করলে সেটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’’

সামান্য অসুবিধা হলেও প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেটা বন্ধ হল।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, সরকার পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। অনেকেই আত্মীয়স্বজনের নামে কিছু করে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সেই সুযোগ আর মিলবে না রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হওয়ায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement