তৈরি: ভোটের জন্য ঝেড়ে-মুছে রাখা মাইক। মানবাজারে। নিজস্ব চিত্র
সব কিছু চলছিল ঠিকঠাকই। নির্বাচনের সময়ে অন্য বারের মতো ব্যাটারি, মাইকসেট ঝেড়েপুছে তৈরি ছিলেন বান্দোয়ান বাজারের অম্বরীশ মাহাতো। রাজনৈতিক দলগুলি ভাড়া নিতে এলেই গুছিয়ে হাতে তুলে দেবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুম করে ছন্দপতন। নির্বাচনের কাজে স্থগিতাদেশ দিল আদালত। প্রচারের জন্য মাইক ভাড়া নেবেন বলে রেখেছিলেন যাঁরা, এ বার তাঁরাও বলছেন, ক’টা দিন থাক।
গেঁটে বাত সারানোর তেল, দাঁতের মাজন— হাটে বাজারে এই সব বিক্রি করবেন বলে বছরভর অনেকে মাইক ভাড়া নেন। নির্বাচন সেখানে ব্যবসায়ীদের কাছে উৎসবের মতো। দু’টো বাড়তি পয়সা আসে। অম্বরীশের মতো অনেকেই এই সময়টায় সরঞ্জামের জন্য বাড়তি কিছু টাকা লগ্নি করেন। তাঁদের অনেকেরই মুখ ভার। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরীক্ষা চলার জন্যে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তেমন ভাবে প্রচার হয়নি। ১২ এপ্রিল আদালতের নির্দেশ জেনে যাওয়ায় প্রচার সেই অর্থে শুরুই হল না।
মানবাজারে পার্ক রোডের বাসিন্দা পার্থ মহান্তী। তিনি বলেন, ‘‘এক দিনের প্রচারের জন্যে ৩০০-৩৫০ টাকা মেলে। নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন দলের কর্মীরা এসে মাইক ভাড়ায় নিয়ে যান। নতুন ব্যাটারি কেনা, যন্ত্র মেরামতি ইত্যাদিতে অনেকটাই খরচ হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম চটজলটি টাকাটা উঠে আসবে। সেটা হল না।’’
পুরুলিয়া শহরের রাজেশ সাও মাইক সেট বিক্রি করেন। ভাড়ায়ও দেন। তাঁর মনে পড়ছে ২০১৩ সালের কথা। রাজেশ বলেন, ‘‘সে বার পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে আবার থমকে গিয়েছিল। প্রায় দু’সপ্তাহ পরে নির্বাচন পর্ব শুরু হয়।’’ মানবাজারের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মাইক ব্যবসায়ী কৌশিক ঘোষ বলছিলেন, ‘‘ওই নির্বাচনে আমাদের দু’বার খাটনি হয়েছিল। ডিসিআরসি অফিসের জন্য প্যান্ডেল বাঁধার কাজ শুরু করেছিলাম। নির্বাচনের দিন পিছিয়ে গেল। আবার দু’সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু হয়েছিল।’’
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ব্লক ভিত্তিক ডিসিআরসির জন্য প্যান্ডেল, মাইক, জেনারেটর, পাখা, আলো— সব মিলিয়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার কাজ থাকে। কোথাও এয়ারকুলার, কার্পেট, জলের ফিল্টারও দিতে হয়। চট করে সে সব মেলে না বলে আগে থেকে অনেকে জোগাড় করে রাখেন। এখন সে সব নিয়ে বসে রয়েছেন।
মফস্সল এলাকায় একই ব্যবসায়ীর থেকে মাইক, প্যান্ডেল, জেনারেটর, আলো— সব বন্দোবস্ত হয়ে যায়। জেলা সদরে অবশ্য এই সমস্ত কাজের জন্য আলাদা আলাদা লোক রয়েছেন। পুরুলিয়ার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর বলেন, ‘‘নির্বাচনে প্যান্ডেল আর আলো ভাড়ায় দিতে হবে ভেবে বিয়ে বাড়ির কাজ ধরতে পারিনি। ৬টি বিয়েবাড়ি ছিল। অন্যদের ছেড়ে দিয়েছি। এখন তো আর সে সব চাইলেও পাব না। প্রায় হাজার তিরিশেক টাকা হাতছাড়়া হল।’’
আবার ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে সুবিধাই হয়েছে। প্রায় চার দশক ধরে এই কাজ করছেন। মানবাজার পোস্ট অফিস এলাকার বাসিন্দা গুরুপদ কর। তিনি বলেন, ‘‘বৈশাখে অনেকগুলি বিয়ের তারিখ রয়েছে। বিয়ে বাড়ির কাজ ধরলে নগদ টাকা মেলে। সরকারি কাজে বিল পেতে দেরি হয়। এক দিক দিয়ে ভালই হয়েছে।’’