এক সময়ে যেখানে তাদের একচেটিয়া সংগঠন ছিল, পুরুলিয়ার সেই জঙ্গলমহলে এ বারে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিতে মুশকিলে প়ড়েছে বামেরা। জেলার কুড়িটি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৪৪৬টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট প্রার্থী দিতে পেরেছে ৩৫৩টিতে। ১৭০টি পঞ্চায়েতের ১৯৪৪টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের ১১৬৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। হিসেব বলছে, প্রার্থী না থাকার এই ছবিটা মূলত জঙ্গলমহল এলাকার। অন্য ব্লকগুলির ক্ষেত্রে এতটাও নয়।
সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক মনীন্দ্র গোপের বাড়ি বরাবাজারে। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনের অর্ধেকেও প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। ওই ব্লকের গ্রামপঞ্চায়েতগুলির ১২২টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছেন ৪৬টি আসনে। বলরামপুর ব্লকেও প্রায় একই অবস্থা। পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে ১০টিতে বাম প্রার্থী রয়েছেন। বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসন। বাম প্রার্থী আছেন ১৩টিতে। ঝালদা ২ ব্লকেরও সমস্ত আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বামেরা। বান্দোয়ানে আবার নিচুতলায় ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি ও জেএমএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে হয়েছে সিপিএমকে।
কেন হল এমন অবস্থা? সিপিএমের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের মতে, জঙ্গলমহল এলাকায় প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিজেপি। আর বামেদের নিচুতলার একটা অংশ ভেঙে সেই দিকেই ঝুঁকছে। গত এক বছরে আড়শা, বলরামপুর, বরাবাজারের মতো ব্লকগুলিতে বেশ কিছু দলবদল হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের নিচুতলার কর্মী সমর্থকোরা যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ব্লকের রাস্তাঘাটে বামেদের নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি দেখা যায়নি। বিভিন্ন গ্রামে বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্টি অফিস খোলার চেষ্টাও বিশেষ হয়নি বলে দাবি কিছু কর্মীর। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, কোনও দলের কর্মী সমস্যায় পড়লে বিজেপি পাশে দাঁড়িয়েছে। তাতেই বামেদের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
তবে বিভিন্ন কারনে দলের সংগঠন কিছুটা দুর্বল হয়েছে বলে স্বীকার করলেও সিপিএমের শীর্ষ নেতারা মানতে নারাজ যে বামফ্রন্টের নিচুতলার কর্মী সমর্থকেরা বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন। জেলার বাম নেতৃত্বের দাবি, জঙ্গলমহলের বিভিন্ন ব্লকে অনেক বামকর্মী সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের নৈতিক সমর্থন বামেদের দিকেই রয়েছে। জেলার এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘বিভাজনের রাজনীতি করে পুরুলিয়ায় বিজেপি কিছুটা জমি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের কর্মীরা কখনও সেই ফাঁদে পা দেননি।’’
এই পরিস্থিতিতে দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটছেন। বসে যাওয়া কর্মী সমর্থকদের ফের দলের কাজে নামচ্ছেন। প্রদীপবাবুর দাবি, বামেদের নিজস্ব প্রতীকের প্রার্থীদের বাইরেও অনেক আসনে বাম-সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। তৃণমূল ও বিজেপিকে রুখতে দলের নিচুতলার কর্মীরা বৃহত্তর ভাবে আসন সমঝোতার পথে হেটেছেন। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘কৌশলগত কারণেই আমরা জেলার অন্তত তিনশো গ্রামঞ্চায়েতের আসনে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছি। বেশ কয়েকটি ব্লকে নির্বাচনের বাস্তব চিত্র দেখে নিচুতলার কর্মীরা আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। সব মিলিয়ে আমরা ভাল ফল করব।”
তবে বামেদের এই দাবি উড়িয়ে বিজেপির বিদ্যাসাগরবাবুর কটাক্ষ, ‘‘সিপিএম তো সমস্ত আসনে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি। জেলায় তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে মানুষ বিজেপিতেই আস্থা রাখবেন।’’