পুরুলিয়া জেলা বিজেপি

আসনের থেকে বেশি মনোনয়ন

মনোনয়ন পর্বে পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকে সব থেকে বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া হুড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

মনোনয়নের শেষ লগ্নে পুরুলিয়া জেলায় শাসকদলকে পিছনে ফেলে দিল বিজেপি। মনোনয়ন শেষ হওয়ার আগের দিন শনিবারই পুরুলিয়াতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বলে দাবি করল গেরুয়া শিবির। আর তা দেখিয়েই শাসকদল দাবি করছে, বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ যে মিথ্যা, ওই পরিসংখ্যানেই তা প্রমাণিত।

Advertisement

তবে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসনের থেকে বিজেপি-র হয়ে জমা পড়া মনোনয়নের সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্পষ্ট যে দলের অনুমতি না নিয়েও অনেকে ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন। তাঁরা সরে না দাঁড়ালে আখেরে ভোট কেটে দলেরই ক্ষতি করবেন বলে মানছেন বিজেপি-র অনেক নেতাই। যদিও বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বুঝে শুনেই অতিরিক্ত প্রার্থী দিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে কেউ কোনও কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও, সেই আসনে শাসকদল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারবে না।’’

মনোনয়ন পর্বে পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকে সব থেকে বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া হুড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর, পাড়া ব্লকে বিজেপি কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাতে ওই সব ব্লকে মনোনয়ন একেবারে থেমে যায়নি। জেলার অন্যত্রও বাধা দেওয়ার অভিযোগ নেই বিরোধীদের কাছ থেকে।

Advertisement

প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনে বিজেপি-র হয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন ৪৯ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে যেখানে জেলায় মোট আসন ৪৪৬টি, সেখানে বিজেপি-র মনোনয়ন জমা পড়েছে ৫০২টি আসনে। গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই অবস্থা। কাশীপুর, পাড়া-সহ বেশ কিছু ব্লকে এখনও বহু আসনে মনোনয়ন জমা করতে পারেনি বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। অথচ জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৪৪টি আসনের সব ক’টিতেই মনোনয়ন দাখিল করে ফেলেছে বিজেপি!

কেন সর্বত্র আসনের থেকে বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে?

রণকৌশল হিসেবে অতিরিক্ত প্রার্থী দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে দলের জেলা নেতারা দাবি করলেও ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে নিচুতলায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে দলের নির্দেশ অমান্য করে বহু কর্মী নিজেরাই মনোনয়ন দাখিল করে বসেছেন। অর্থাৎ একটি আসনে বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন একাধিক প্রার্থী। দলের অনুমোদন না থাকা সমস্ত কর্মীরা যে শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করবেন, এমন দাবিও জোর গলায় করতে পারছেন না অনেকেই। সে ক্ষেত্রে গোঁজ হিসেবে তাঁরা না শেষে দলের প্রার্থীর ভোটও কেটে নেন— এমন সংশয়ের কথাও শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শাসকদলকে নির্বাচনে বেগ দেওয়া দূর অস্ত্‌, নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে।

বস্তুত, শাসকদল তৃণমূলের মতোই গোষ্ঠী কোন্দলের সমস্যায় সাম্প্রতিক অতীতেও বেগ পেতে হয়েছে বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বকেও। সেই দ্বন্দ্ব নির্বাচনের মুখে নিচুতলাতেও ছড়িয়েছে। দল সূত্রেই খবর, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা নিজেরাই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, এমন তথ্যও আছে দলের কাছে। অন্যদল থেকে বিজেপিতে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকেও আবার জেলা নেতৃত্বকে না জানিয়েই প্রার্থী হয়ে পড়েছেন। আজ, সোমবার মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরে তিনটি স্তরে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে কী দাঁড়ায় তা নিয়ে দুর্ভাবনায় রয়েছেন বিজেপি-র অনেক নেতাই।

তবে প্রশ্ন শুনে বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ বিজেপি-র জেলা সভাপতি। দলীয় কোন্দলের জেরে অতিরিক্ত প্রার্থী দাঁড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে যেখানে শাসকদল সন্ত্রাস চালিয়ে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে পারে, সেখানে একটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে দাঁড় করানো হবে। যাতে আমাদের কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও ওই আসনে ‘ওয়াকওভার’ না পেয়ে যায় তৃণমূল। সে কারণেই মোট আসনের থেকে বেশি প্রার্থী হয়েছে আমাদের।” তাঁর দাবি, কোনও গোঁজ প্রার্থী থাকবে না।

তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘এক বার কেউ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে তাঁকে ভোটের লড়াই থেকে সরানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য আছে, টিকিট না পেয়ে অন্যান্য দল থেকে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে গিয়ে তাদের হয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন।’’ তৃণমূলের জেলার সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালির কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি নিয়ম করে প্রতিদিন আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে। আমরা সন্ত্রাস করলে বিজেপি-র হয়ে এত প্রার্থী মনোনয়ন দিলেন কী ভাবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement