পাহারায় ১ জন করে সশস্ত্র পুলিশ আর লাঠিধারী সিভিক কর্মী

বুথ কি নিরাপদ,সংশয়

ভোটের দিন সেই বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকছেন এক জন সশস্ত্র পুলিশ আর এক জন লাঠিধারী সিভিক কর্মী। তাঁদের ভরসায় কী ভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বিঘ্নে ভোট করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:৪০
Share:

প্রস্তুতি: চড়ছে পারদ। বাঁকুড়া ১ ব্লকে চলছে তোড়জোড়। এখান থেকেই বিভিন্ন বুথে যাবে পাখা ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

মনোনয়ন পর্বে খোদ জেলাশাসকের অফিস চত্বরেই বিরোধীদের উপরে হামলা হয়। জেলাজুড়ে প্রায় সব ব্লক অফিসের সামনেই দিনের পর দিন বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের লোকজনের বিরুদ্ধে। রক্তও ঝরেছে জঙ্গলমহলে। ভোটের দিন সেই বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকছেন এক জন সশস্ত্র পুলিশ আর এক জন লাঠিধারী সিভিক কর্মী। তাঁদের ভরসায় কী ভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বিঘ্নে ভোট করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।

Advertisement

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকায় বিরোধীরা মনোনয়ন করতে না পারায় কোনও বুথেই ভোট হচ্ছে না। মূলত খাতড়া মহকুমার সর্বত্র ভোট হচ্ছে। আর বাঁকুড়া সদর মহকুমার কিছু এলাকায় ভোট হবে। যদিও পাশের পুরুলিয়া জেলার সব বুথেই ভোট হচ্ছে। তবে সেখানেও মনোনয়ন পর্ব থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই কাল, সোমবার দুই জেলায় নির্বাচন কতটা নির্বিঘ্নে হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বিরোধীরা।

উল্লেখ্য, মনোনয়ন পর্ব থেকেই শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে বিরোধীরা। রানিবাঁধে মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে খুন হন এক বিজেপি কর্মী। প্রচার পর্বে রাইপুরের বারিকুল থানা এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীর সভাতে তির ও নানা অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটে। বিরোধীদের প্রশ্ন, মনোনয়ন পর্বেই কয়েকশো দুষ্কৃতী বিডিও এবং এসডিও অফিসের সামনে জমায়েত করেছিল। ভোটের দিন বুথে একই ঘটনা ঘটে গেলে এক জন সশস্ত্র পুলিশ ও এক জন সিভিক ভলেন্টিয়ার কী ভাবে সামলাবেন?

Advertisement

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই জেলার মোট ১২৭৭টি বুথে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে। যার মধ্যে বাঁকুড়া সদর মহকুমায় রয়েছে ৪০০টি ও খাতড়া মহকুমায় রয়েছে ৮৭৭টি বুথ। জেলায় মোট সেক্টর রয়েছে ১৭২টি। প্রতিটি সেক্টরেই পুলিশ কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। কোথাও কোনও গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটলে বুথে যাবেন তাঁরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূলত জেলার পুলিশ ও সিভিক কর্মীরাই ভোটে থাকবেন। কিছু অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর বাইরে থেকে আনা হচ্ছে।’’ দুষ্কৃতীরা যাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ টহল দেবে।

বাঁকুড়ার বাসিন্দা তথা বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘মনোনয়ন পর্বেই দেখা গিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্ক়ৃতীরা এক দল পুলিশের সামনেই দাপাদাপি করেছে। তাহলে বুথে নিধিরাম সর্দার হয়ে থাকা এক পুলিশ ও এক সিভিক কর্মী কী ভাবে দুষ্কৃতীদের বাধা দেবে? সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভোটাধিকার হরণ করা হবে।’’ তবে গ্রামবাসীদের তাঁরা ভোটের দিন অপরিচিত লোক দেখলেই পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের খবর দিতে বলেছেন। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতিও সেই সুরে অভিযোগ করেন, “মনোনয়ন পর্বে এসডিও অফিসের সামনে কয়েকশো পুলিশ থেকেও দুষ্কৃতীদের সরিয়ে বিরোধীদের দফতরে ঢোকাতে পারেনি। ভোটের দিনেও পুলিশ ঠুটো জগন্নাথ হয়েই থাকবে। আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই করে নেব।’’ যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খানের দাবি, “পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভোটের আগেই মনোবল ভেঙে গিয়েছে সিপিএম, বিজেপির। তাই এখন থেকে সবেতেই জুজু দেখছে ওরা।”

পুরুলিয়ার ২৩১৫টি বুথের সব ক’টিতেই ভোট হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের ১৯৪৪ আসনের মধ্যে ১৯২০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। বাকি ২৪টি আসনের মধ্যে ২৩টিতে লড়াই হচ্ছে না। আর কাশীপুরের পঞ্চায়েতের একটি আসনে প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ওই আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছে বলে জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানিয়েছেন। ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির ৪৪৬টি আসনের মধ্যে ৪৪১টিতে ভোট হচ্ছে। পাঁচটি আসনে লড়াই হচ্ছে না। জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনেই ভোট হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, জেলার ২৩১৫টি বুথের মধ্যে ৬৩টি বুথকে অতিরিক্ত উত্তেজনাপ্রবণ এবং ১৭৯টি বুথকে উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুথের নিরাপত্তা সামলানোর জন্য গোটা জেলায় ৩০৫০ জন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ৩৫৯১ জন সিভিক কর্মীও। জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রতিটি বুথেই সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখা হচ্ছে। উত্তেজনাপ্রবণ বা অতিরিক্ত উত্তেজনাপ্রবণ বুথগুলিতে একাধিক সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকবে।’’

জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন থাকবে। গোলমাল হলেই সেই টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছবে। এর পাশাপাশি রেড়িও ফ্লাইং স্কোয়াডও কাজ করবে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, ২৪৯টি বুথে ছবি তোলার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement