নদীখাতে বালির নীচে পাওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি শেল (গোলা) নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করল সেনাবাহিনী। দুবরাজপুরে অজয় নদের কোটা ঘাটের অদূরে শুক্রবার সকাল থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ ফুট দীর্ঘ লোহার চাদরে মোড়া শেলটি নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞ সেনা কর্মীরা।
বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পানাগড় থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এসে এই কাজ শুরু করেছেন। আশাকরি দু’দিনের মধ্যেই নিষ্ক্রিয় করার কাজ শেষ করা যাবে।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অজয়ে বালি তুলতে গিয়ে বিশাল আকারের শেলটি দেখতে পান বালি শ্রমিকেরা। পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পরে জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয় দুবরাজপুর থানার তরফ থেকে। কিন্তু বহু পুরনো একটি শেল পাওয়া গিয়েছে এই খবর ছড়াতে সময় লাগেনি। উৎসাহী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। শেলটি পুরনো হলেও বিপদ ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় সেনা আধিকারিকদের। ২৮ ডিসেম্বর পানাগড় সেনা ছাউনি থেকে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে যান। তাঁরাই জানান এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। শেলটিকে নিষ্ক্রিয় করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শেলটির চারপাশে উঁচু বালির বাঙ্কার গড়ে তোলা হয়। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার পরেই শুক্রবার থেকে শেল নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান সেনা আধিকারিকেরা।
তবে কোটা ঘাটে শেল উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম নয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে মার্চের শেষের দিকে এই রকম দুটি শেল একই ভাবে বালি তোলার সময় দেখতে পান বালি শ্রমিকেরা। সেবারও পুলিশি ঘেরাটোপে শেলগুলি পড়ে থাকার পরে সেনা বিশেষজ্ঞরা গিয়ে সরেজমিনে দেখেন এবং জানিয়ে দেন শেলগুলি নিষ্ক্রিয় করার দরকার নেই। তারপরে বহুদিন বালির চরে পড়েছিল শেল দুটি। বেশ কিছুদিন পরে একটি শেল কেউ তুলে নিয়ে যায়। যেটি পড়ে ছিল তার উপর বালি চাপা পড়ে। এবারের উদ্ধার হওয়া শেলটি আগের শেলটাই বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ।
বীরভূমের আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক প্রয়াত অর্ণব মজুমদার আগের শেলগুলি উদ্ধারের পরে জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অজয়ের পাশেই বায়ুসেনার ছাউনি ছিল। শেলগুলি সেখানেই মজুদ ছিল। নদীর গতিপথ বদলের জন্যই হোক বা নদী খাত প্রশস্ত হওয়ায় সেগুলি বালি চাপা পড়ে গিয়েছিল।
তবে এবার পুলিশ ও সেনা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে বিষয়টিতে। তাই নিষ্ক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ধরণের শেল ফাটলে এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই আর কোনও ঝুঁকি নয়। জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা এ দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন।