আলাপ: রঘুনাথপুর ব্লক অফিসে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে পড়তে পড়তেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সিগারেট ধরিয়ে ছিল ছেলেটি। দিনে পাঁচটির কমে তার চলছিল না। কিন্তু বান্ধবীর সঙ্গে ‘অন্বেষা ক্লিনিকে’ গিয়েই সে এখন একটির বেশি সিগারেট খায় না। ইচ্ছে রয়েছে, খুব শীঘ্রই সে একেবারেই ধূমপান ছেড়ে দেবে।
২০১৫ সাল থেকে পুরুলিয়া জেলার ২০টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাজ্য সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়েদের সমস্যার সমাধানে ‘অন্বেষা ক্লিনিক’ চালু হয়েছিল। বুধবার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় সেই ক্লিনিকের কাজ দেখতে আসা ইউনিসেফের কর্মকর্তাদের রঘুনাথপুর ব্লকডাঙা এলাকার বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্র আকাশ বাউরি নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিল।
তার বান্ধবী সজলি বাউরি বলে, ‘‘অন্বেশা ক্লিনিকে নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুনতাম। আকাশকে বলেছিলাম, সিগারেট ভাল নয়, ছেড়ে দে। কিন্তু সে নেশার পক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছিল। তখন ওকে ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো ভাল করে ওকে বুঝিয়ে দিতেই আস্তে আস্তে নেশা কমাতে শুরু করেছে।’’ মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় ওই কিশোরকে ধন্যবাদ জানান। আদতে এই ক্লিনিক যে কিশোর-কিশোরীদের শুধু নিজেদেরই সুস্থ রাখার পরামর্শ দেয় তা নয়, তাদের সঙ্গীদেরও ভাল রাখতে শেখায়। রঘুনাথপুর ব্লকের কমিউনিটি হলে ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সান্ত্রা খাতুন, রাজা বাউরি-সহ অনেকেই নিজেদের এ রকম নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনান।
তার আগে রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ক্লিনিক তাঁরা পরিদর্শন করেন। পরে স্থানীয় এমএম হাইস্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। ইউনিসেফের অ্যাডোলেসেন্ট এনগেজমেন্ট স্পেশ্যালিস্ট স্বপ্নদীপা বিশ্বাস বলেন, ‘‘কিশোর-কিশোরীরা বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই এই ক্লিনিকগুলি কাজ করছে।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক অরুণাভ মাইতি বলেন, ‘‘এই বয়সে শরীরে ও মনে অনেক পরিবর্তন আসে। তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এই ক্লিনিক।’’
রঘুনাথপুর ১ ব্লকের এই ক্লিনিকের কর্মী মামণি মাহাতো বলেন, ‘‘অজ্ঞতা থেকে অনেক মেয়ে ভালবাসার কারণে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। খবর পেলে আমরা ওই মেয়ে ও তার পরিবারকে বোঝাই। অনেকেই এখন সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।’’ তবে ক্লিনিকগুলিতে এখনও কিশোরদের যাতায়াত কম। ইউনিসেফের পক্ষে জেলার দায়িত্বে থাকা অরুণাভ রায় বলেন, ‘‘অবস্থা পাল্টাচ্ছে। আগে যে হারে ছেলেমেয়েরা ক্লিনিকে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আসত, এখন অনেক বেশি আসছে।’’
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার কিছু এলাকায় কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই ক্লিনিক কিশোর-কিশোরীদের সেই প্রতিবন্ধকতা কাটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। নিজেদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা নিয়ে নিজেরাই কথা বলছে। এটাই তো আমাদের পাওনা।’’