শ্রোতা: বাসাপাড়ায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
শহিদ দিবসের দিনটিও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের হাতিয়ার করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার নানুরের বাসাপাড়ায় পঞ্চায়েত সংলগ্ন মাঠে শহিদ দিবসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুব্রত বলেন, ‘‘শহিদের রক্ত-ঋণের কথা ভুললে হবে না। এর আগে বিরোধীরা সামান্য দু’একটি আসন পেয়েছে। এ বার যেন পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের একটা আসনও না পায়। সেটা দেখবেন।’’
২০০০ সালে সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরকে খুনের অভিযোগ ওঠে। তাতে নাম জড়ায় সিপিএম নেতাকর্মীদের। তার পরের বছর থেকেই বাসপাড়া বাসস্ট্যান্ডে শহিদবেদী নির্মাণের পাশাপাশি শহিদ দিবস পালন করেন রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিকে প্রায় প্রতি বছরই শহিদ দিবসে হাজির থেকেছেন দলনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি হাজির হতে না পারলেও দলের রাজ্যস্তরের নেতারা শহীদ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বীরভূম তো বটেই, লাগোয়া বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ থেকে বাস-ভর্তি করে কাতারে কাতারে দলীয় কর্মী-সমর্থকরাও যোগ দিয়েছেন ওই সমাবেশে।
এ বারও হাজার দশেক কর্মী-সমর্থক যোগ দিয়েছিলেন। মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে নানুর এলাকায় তৃণমূলের তেমন অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। তারপরেও সিপিএম তথা বামেদের সেই রমরমা বাজারে ওই হত্যাকাণ্ডকে প্রচারের বিষয় করে স্থানীয় থুপসড়া এবং চারকল গ্রাম পঞ্চায়েতে যথাক্রমে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে জেতে তৃণমূল। দলীয় সদস্যদের দলবদল এবং পদত্যাগের জেরে পঞ্চায়েত দুটির ক্ষমতা বেশি দিন ধরে রাখতে না পারলেও, তখন থেকেই নানুরে তৃণমূলের সংগঠন দানা বাঁধতে শুরু করে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
সেই হিসেবে শহিদ দিবস পালন বরাবরই বিশেষ অর্থবহ। ওই শহিদ সমাবেশ থেকেই সুচপুর হত্যাকাণ্ডে নিহত এবং আহতদের রেলে চাকরির প্রতিশ্রুতি-সহ ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তদানীন্তন রেলমন্ত্রী, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণও হয়েছে। যদিও একটি শহিদ পরিবার আজও চাকরি পাননি। কাঁটার মতোই বিঁধে আছে বিষয়টি। নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, পারিবারিক জটিলতার কারণেই ওই পরিবারের চাকরি হয়নি। খুনের দায়ে ২০১০ সালে ৪৪ জন সিপিএম নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন সাজাও হয়। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে ১৯ জন খালাস পেয়েছেন। জেলবন্দি অবস্থায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা আজও সাজা খাটছেন।