—ফাইল চিত্র।
বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা প্রচারে নামলেন দুবরাজপুর পুর এলাকায় থাকা অঙ্গনওয়াড়ি এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মী সহায়িকা ও দিদিমণিরা।
শনিবার সকাল থেকে পুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছেন ওঁরাও।
গত তিন সপ্তাহ ধরে জেলায় ডেঙ্গি রোগের প্রকোপ চলছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি পুরশহর দুবরাজপুরের। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, শনিবার পর্যন্ত জেলায় ৮০ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তার মধ্যে শুধু দুবরাজপুর পুর এলাকায় সংখ্যাটা ৫০। গত বুধবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোরের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য ছেলেটির মৃত্যুকে ডেঙ্গি বলে মানতে চায়নি। তবুও দুবরাজপুর পুরসভা এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া (যে ওয়ার্ডে এ যাবৎ ৪০ জন আক্রান্ত) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কিশোরের মৃত্যুর পর সকলে ধরেই নিয়েছেন ওই কিশোর মারা গিয়েছে ডেঙ্গিতেই। এরপরই রোগ নিয়ে নিয়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দুইই ছড়ায়।
ঘটনা হল, মশাবাহিত রোগ কোনও ভৌগোলিক সীমা মেনে ছড়ায় না। দুবরাজপুর পুরসভাকে এই কথাটা বহু বার বুঝিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। এলাকাবাসীর দাবি, তা সত্বেও দুবরাজপুর পুর এলাকার সাত নম্বর ওয়ার্ডে মশার বংশ বিস্তার রোধে বা সচেতনতা প্রচারে যে তৎপরতা সেখানে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও বাকি ওয়ার্ডগুলিতে দেখা যায়নি। না নিকাশি নালা পরিচ্ছন্ন হচ্ছে, না বাড়ি বাড়ি সচেতনতা প্রচার হচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। তারপরই সচেষ্ট হয় পুরসভা। পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে মাত্র ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ি বাড়ি সচেতনতা প্রচারের গুরু দায়িত্ব লাঘব করতে পুর এলাকার শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ৭৮ জন দিদিমণি, ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর ৪৮ জন কর্মী সহায়িকাকে সাহায্য করতে অনুরোধ করেন। কী ভাবে প্রচার করতে হবে পুরসভা কক্ষে শুক্রবারই সিএমওএইচ সকলকে তা বোঝান।
স্বাস্থ্য কর্তাদের কথায়, ডেঙ্গি ছাড়ানোর জন্য দায়ী এডিস মশা। ডেঙ্গি জীবাণুবাহী ওই মশা যাকেই কামড়াবে, তার শরীরেই ওই জীবাণু প্রবেশ করবে। দিন দশেকের মধ্যেই আক্রান্তের ডেঙ্গি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাবে। জমা পরিষ্কার জলে একবারে ১০০-১৫০টি ডিম পাড়ে একটি এডিস মশা। জীবদ্দশায় তিন বার ডিম পাড়ে। সহজেই অনুমান করা যায়, একটি পূর্ণাঙ্গ বাহক মশা কত সংখ্যক ডেঙ্গি জীবাণুবাহী মশা তৈরি করতে পারে। ফলে রোগটি সংক্রামিত হয় দাবানলের মত। রোগ রোখার একমাত্র উপায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধ। সেটা হতে পারে লার্ভা থাকা অবস্থায় সেগুলিকে যদি নষ্ট করে দেওয়া গেলে কিংবা ডিম পাড়ার সুযোগ না দিলে।
স্বাস্থ্যকর্তারা এটাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে বলেছেন। বাড়ির আশেপাশে কোনও পাত্রে জল জমে থাকতে দেবেন না। বাচ্চাদের হালকা রঙের ফুলহাতা জামা পরিয়ে রাখুন। মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে। আর জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যান। শনিবার থেকে সেটাই শুরু করেছেন ওঁরা। সিএমওএইচ বলছেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও ভিন্ন উপায় খোঁজা হচ্ছে।’’