অ্যাসিড হানায় জখম ছাত্রী
Acid victim

দু’বছর পার, টাকা আটকে ক্ষতিপূরণের

নলহাটিরই একটি গ্রামের বাসিন্দা, ওই মেয়েটির সহপাঠী মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে এসে তাকে ডেকেছিল।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:১৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার ঠিক আগে তার লেখার হাতেই অ্যাসিড ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তারই এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে। এখনও ডান হাতের যন্ত্রণা যায়নি। মাঝেমধ্যেই সেই যন্ত্রণার জন্য ডাক্তার দেখাতে হয়। অদম্য জেদ ও মনের জোরে সে মাধ্যমিক দিয়েছিল। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকও দিয়েছে নলহাটির একটি স্কুলের ওই ছাত্রী। কিন্তু, অ্যাসিড হানার দু’বছর পরেও রাজ্য সরকার থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি ওই নাবালিকা। কবে পাবে, আদৌ পাবে কি না, সেই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে নাবালিকার পরিবার।

Advertisement

নলহাটিরই একটি গ্রামের বাসিন্দা, ওই মেয়েটির সহপাঠী মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে এসে তাকে ডেকেছিল। সেটা ২০২৩ সাল। নাবালিকার অভিযোগ, উপহার দেওয়ার নাম করে ডান হাত বাড়াতেই সহপাঠী একটি কৌটো বার করে তার হাতে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। এর পরে ছেলেটি একটি চিঠি ফেলে দিয়ে দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকে অন্য এক জনের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরীক্ষায় ওই ছাত্রী যাতে ভাল ফল না করতে পারে, তার জন্যই সহপাঠী ওই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ।

এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ওই পরীক্ষার্থীর মা বলেন, ‘‘মেয়ের ডান হাতে এখনও টান ধরে। লিখতে কিছুটা অসুবিধা হয়। চিকিৎসার জন্য কিছুদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। আসিড হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা এখনও পাইনি। টাকা পেলে মেয়ের ভাল ভাবে চিকিৎসা করাতে পারতাম। এত দেরি হচ্ছে কেন, আমরা জানি না।’’ তিনি জানান, প্রথম দিকে তাঁর মেয়ের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ নতুন করে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানিয়েও পাওয়া যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের যারা ক্ষতি করেছে, তাদের শাস্তি চাই। কিন্তু সরকারি সাহায্য না পেলে ওর ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারব না।’’

Advertisement

অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীরাও বলছেন, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকেন আক্রান্তেরা। কেউ কেউ আবার ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ পেলেও বিভিন্ন কারণে তাঁরা যে আরও বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন, সেটুকুও জানতে পারেন না। আইনজীবীদের একাংশের মতে, মতে, ‘‘ক্ষতিপূরণ আর সুবিচার এই নির্যাতিতাদের অধিকার।’’

বীরভূমের এই নাবালিকা কবে পাবে ক্ষতিপূরণ?

মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলব।’’ ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (ডিএলএসএ) বা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব নিরুপমা দাস ভৌমিক বলেন, ‘‘বিষয়টি কী হয়ে আছে, সেটা না জেনে বলতে পারব না।’’ তবে, জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষেরই কর্মী মানস ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘ওই নাবালিকার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে সমস্ত কাগজপত্র স্টেট লিগ্যাল সারভিসেস অথরিটিকে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে কী পরিস্থিতি, তা তারাই বলতে পারবে।’’

ডিএলএসএ সূত্রেই দাবি করা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে এই ধরনের ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য আইনি পরিষেবা দফতরে আটকে আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement