বাঁকুড়ায় আম্রপালি আম উৎপাদনে কোপ। নিজস্ব চিত্র।
শীতকালে বৃষ্টির কোপ পড়েছে বাঁকুড়ার আম্রপালি আম উৎপাদনে। সেই ঘা শুকোয়নি এখনও। ফলে তার ফল ভুগতে চলেছেন আম বাঙালি। শুধু তাই নয়, এ বার ফলনের যা অবস্থা তাতে অন্যান্য বারের মতো বিদেশ যাওয়া হয়ে উঠবে না বাঁকুড়ার আম্রপালির।
গত প্রায় এক দশকে রাজ্যের আম মানচিত্রে উপরের দিকেই অবস্থান বাঁকুড়া জেলার। রাজ্য, দেশ এমনকি বিদেশের বাজারেও স্বাদে গন্ধে মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে বাঁকুড়া জেলার আম্রপালি আম। রুখাশুখা বাঁকুড়ায় ২০০৬ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে আম্রপালি চাষ শুরু হয়। বর্তমানে জেলার প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে আমবাগান। জেলায় প্রতি বছর গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আম। জেলার চাহিদা মিটিয়ে সেই আম পাড়ি দেয় দিল্লি-সহ অন্যান্য রাজ্যে। পাশাপাশি কাতার, কুয়েত, দুবাই-সহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকাতেও পৌঁছয় ওই আম।
কিন্তু এ বার সেই উৎপাদনে বাধ সেধেছে প্রকৃতি। আমের ভরা মরশসুমে জেলার অধিকাংশ আমবাগানে আম অমিল। ফলে এ বার ভিন্রাজ্য বা বিদেশের বাজারে আম রফতানি দূরে থাক, জেলার চাহিদাই পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আমচাষিরা। বাঁকুড়ার দামোদরপুর এলাকার আমচাষি আশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের বাগানে সাড়ে তিন হাজার আম্রপালি প্রজাতির আমগাছ রয়েছে। অধিকাংশ গাছেই এ বার মুকুল আসেনি। অল্প দু’একটি গাছে যা মুকুল এসেছিল একের পর এক কালবৈশাখীতে তা-ও ঝরে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে আমাদের বাগানের আমের স্বাদ এ বার আমরা পাব কি না তা নিয়েই ঘোর সন্দেহ।’’ ওই এলাকারই আর এক আমচাষি অনুপম সেন বলেন, ‘‘অন্যান্য বছর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আম তুলে তা বাজারে পাঠানো হয়। আমাদের বাগানের ফল প্রতি বছর দিল্লিতে আমমেলায় যায়। কাতার, কুয়েত এবং দুবাইয়েও আম রফতানি করা হয়। কিন্তু পরিমাণ মতো আম উৎপাদন না হওয়ায় এ বার সমস্ত বরাত বাতিল করতে হয়েছে। আমরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছি।’’
কিন্তু কেন এমন ঘটনা? বাঁকুড়া জেলা উদ্যান পালন দফতরের ফিল্ড অফিসার সঞ্জয় সেনগুপ্তের ব্যাখ্যা, ‘‘এ বছর জেলায় শীত দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। তা ছাড়া শীতে মাঝেমাঝে বৃষ্টি হয়েছিল। নিম্নচাপও দেখা দিয়েছিল। এই দুইয়ের জেরে অধিকাংশ আম গাছে আমের মুকুল না এসে পত্রমুকুল বার হয়। কিন্তু পত্রমুকুল থেকে আম হয় না। ফলে উৎপাদনে ব্যাপক হারে প্রভাব পড়েছে। আমাদের আশঙ্কা জেলা জুড়ে এ বার আম উৎপাদনে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৭৫ শতাংশ। যা গত এক দশকে নজিরবিহীন।’’