তোড়জোড়: এই বাড়ির দাওয়ায় বসে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজন করার কথা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
রাতারাতি যেন ‘ভিআইপি’ হয়ে উঠেছেন বাঁকুড়া ১ ব্লকের চতুর্ডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদার পরিবার। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজ।
আজ, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে দলীয় কর্মসূচিতে এসে শাহ চতুর্ডিহি গ্রামের ওই বাড়িতে আসবেন বলে দল সূত্রের দাবি। তাই তাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মঙ্গলবার থেকে ওই দিনমজুর পরিবারের উঠোনে পুলিশ-কর্তা থেকে বিজেপি নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে সেই বাড়িতে হাজির বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ থেকে শুরু করে জেলা বিজেপির বিভিন্ন পদের নেতারা। বাড়ির আঙিনা লোকে লোকারণ্য। বাড়ির উঠোনে জমে থাকা মাটির স্তূপ সৌমিত্রবাবু দায়িত্ব নিয়ে লোক লাগিয়ে সরাচ্ছিলেন। তাঁকেও এক সময়ে অন্য কর্মীদের সঙ্গে কোদাল ধরতে দেখা গেল। তবে সবার নজর বিভীষণবাবু ও তাঁর স্ত্রী মণিকাদেবীর দিকে।
বিভীষণবাবু বলেন, “কখনও কল্পনা করতে পারিনি গরিবের বাড়িতে এত বড় মাপের মানুষের পা পড়তে পারে! বাড়িতে ভিড় লেগেই রয়েছে।’’ মণিকাদেবীর অবশ্য চিন্তা হেঁশেল নিয়ে। তিনি বলেন, “যে মোটা স্বর্ণ চালের ভাত খাই, মন্ত্রীর পাতে তা দেব না। সরু মিনিকিট চাল কেনার কথা ভেবেছি মন্ত্রীর জন্য। সঙ্গে মুসুর ডাল, কুমড়ো ও কপির তরকারি, পোস্ত বাটা এবং টোম্যাটোর চাটনি থাকবে। এমন বড় মাপের মানুষকে খাওয়ানোর সুযোগ তো বার বার মিলবে না।”
সদ্য করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা শাহের এই সফর ঘিরে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্ক দলও। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, ‘‘এ দিন ওই বাড়িতে প্রচুর লোকজন গিয়েছেন। তাই বৃহস্পতিবার সকালেই দল থেকে ওই বাড়ি স্যানিটাইজ় করা হবে। পরিবারের প্রত্যেককে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হবে। অমিতজির জন্য কলাপাতায় খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলাপাতা দল থেকেই দেওয়া হবে।’’
মণিকাদেবী বলেন, ‘‘নেতারা বলেছেন, মন্ত্রী থাকাকালীন সব সময়ে মাস্ক পরে থাকতে হবে। মাস্ক পরেই তাঁকে খাবার দেব।’’
শাহের মধ্যাহ্নভোজের জন্য এই গ্রামকেই কেন নির্বাচন করা হল?
তা নিয়ে চর্চা চলছে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির পর্যবেক্ষকদের মধ্যে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে চতুর্ডিহি গ্রাম সংসদ-সহ ১২টি আসন জেতে তৃণমূল, চারটি আসন পায় বিজেপি। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে আন্ধারথোল পঞ্চায়েতে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। যদিও চতুর্ডিহি সংসদের বুথে ভোট প্রাপ্তিতে অল্প ব্যবধানে তৃণমূল এগিয়ে ছিল।
তবে সে হিসেবে না গিয়ে সাংসদ সৌমিত্র দাবি করেন, “কেবল চতুর্ডিহি গ্রামই নয়, গোটা বাঁকুড়া ১ ব্লকটাই এখন বিজেপির পক্ষে চলে এসেছে। তাই এখানকার মানুষ অমিতজিকে দু’হাত খুলে স্বাগতম জানাচ্ছেন।” যদিও বাঁকুড়া ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সন্দীপ বাউরির দাবি, “দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে দেখতে মানুষের আগ্রহ থাকতেই পারে। কিন্তু এর কোনও ফায়দা এখানে বিজেপি পাবে না।’’
এ সব কথা হাঁসদা বাড়ির চৌকাঠের বাইরে। ভিতরে বিভীষণবাবু ও মণিকাদেবী ব্যস্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আপ্যায়নের আয়োজনে। বিভীষণবাবুর ছেলে মৃণাল নবম শ্রেণিতে ও মেয়ে রচনা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মৃণাল ও রচনা বলে, “এখন থেকেই বাড়িতে এক সঙ্গে কত মান্যগণ্য লোকজন আসছেন। আমাদের ডেকে কথা বলছেন। কত পুলিশকর্মী আমাদের বাড়ির পাশে সব সময় থাকছেন। সবার কাছে আমাদের কদর বেড়ে গিয়েছে। উপভোগ করছি।” পাকা দাওয়ায় বসে বিভীষণবাবুর বৃদ্ধা মা ফুলমণিদেবী বলেন, “ক’দিনের জন্য হলেও এত মানুষের খাতির পাওয়া কি কম সৌভাগ্যের?’’