অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।
এই লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মত ছিল, ভারতের নাগরিকেরা বিজেপির হিন্দুরাষ্ট্রের আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বার অমর্ত্য মন্তব্য করলেন, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে কিছুটা আটকানো গিয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়েও বিজেপির সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তাঁর দাবি, ‘‘সংবিধান বদল করতে যে যে আলোচনার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি।’’
প্রতীচী ট্রাস্টের তরফে প্রায় প্রতি বছরই একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। এ বার সেই আলোচনাচক্রের বিষয় ছিল, ‘কেন স্কুলে যাই: সহযোগিতার সহজ পাঠ’। শনিবার বোলপুরে ওই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন প্রতীচী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অমর্ত্য। আলোচনায় ছিলেন অধ্যাপক জঁ দ্রেজ। এ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়ারা ওই আলোচনাচক্রে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন অমর্ত্য। বক্তব্যে ছুঁয়ে যান ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে পর্যন্ত আলোচনা পৌঁছে গিয়েছিল! ভারতকে কী ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র করা যায় সেই আলোচনা হত। কিন্তু, আমাদের জানা দরকার, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য বাচ্চাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তাই দেশে লোকসভা নির্বাচনে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে আটকানো গেল।’’
ফৈজাবাদ লোকসভার কেন্দ্রের ফলের প্রসঙ্গ টেনে এনেও বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, ‘‘ওরা এটা মানতে পারল না যে, যেখানে বড় মন্দির তৈরি হল, সেখানে এক জন সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) দলের প্রার্থী, হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন।’’ পর ক্ষণেই অর্থনীতিবিদের সংযোজন, ‘‘দেখুন, ভারত একেবারেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়। তবে বহু ধর্মের দেশ তো বটেই।’’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছেন। প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, মনমোহন সিংহের সরকারের সময়ে অমর্ত্যের সভাপতিত্বে তৈরি হয় ‘নালন্দা মেন্টর গ্রুপ’। ২০১২ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য হন তিনি। আচার্য হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয় মোদী সরকারের জমানায়— ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। তার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সদস্য ছিলেন অমর্ত্য। ২০১৬ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্ক ছিন্ন হয়। পরিচালন সমিতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি। আলোচনায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও আক্ষেপ করেছেন অধ্যাপক সেন। একটা সময়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য ছিলেন তিনি। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য বলেন, ‘‘বুদ্ধদেবের (গৌতম বুদ্ধ) থেকে নানা কিছুর শেখার আছে। নালন্দায় আগের সরকার আর বর্তমান সরকার কিছু করেনি।’’
আগেও মোদী সরকারের নোটবন্দি-সহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অমর্ত্য। পাল্টা বিশ্বভারতীর জমি-বিতর্কে তাঁকে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। শনিবার দেশের বেকার সমস্যা নিয়েও কথা বলতে গিয়ে অমর্ত্য অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর নিন্দা করেছেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়ে মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সংবিধান বদলাতে গেলে যে আলোচনা দরকার, সেগুলি হয়নি। আরও আলোচনার তো প্রয়োজন ছিল। তার প্রমাণ (আলোচনা হয়েছে বলে) তো দেখি না।’’