বাড়ি তৈরির প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই খবর, সাধারণত বিপিএল তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া প্রকৃত দুঃস্থ গৃহহীন পরিবারের গীতাঞ্জলি আবাসন প্রকল্পে দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩২
Share:

চিন্তা: মেলেনি ঘর। ক্ষুব্ধ ছবিরাম-চায়নারা। —নিজস্ব চিত্র।

দাদা শাসকদলের সক্রিয় কর্মী। তাই পাকাবাড়ি থাকা স্বত্ত্বেও মিলেছে দুঃস্থদের জন্য বরাদ্দ বাড়ি তৈরির অনুদান। স্ত্রী বিরোধী দলের কর্মী। তাই মাথার উপর বাড়ির চাল ভেঙে পড়লেও হতদরিদ্র দিনমজুরের কপালে জোটেনি সেই অনুদান। এমনই বৈপরীত্যের অভিযোগ তৃণমূল পরিচালিত সাঁইথিয়ার হরিশাড়া পঞ্চায়েতে।

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই খবর, সাধারণত বিপিএল তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া প্রকৃত দুঃস্থ গৃহহীন পরিবারের গীতাঞ্জলি আবাসন প্রকল্পে দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়ার কথা। মূলত পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসন, শাসক দলের বিধায়ক, সাংসদের সুপারিশে ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে ওই অনুদান বরাদ্দ হয়। ওই সুযোগকে সামনে রেখে বাড়ির অনুদান বিলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ, আর্থিক সংগতি সম্পন্নদের গোপন বোঝাপড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে অনুদানের টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই পঞ্চায়েতে এলাকাতেই রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে প্রেমানন্দ রায় নামে এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর ভাই নিরানন্দ রায়কে একান্নবর্তী স্বচ্ছল পরিবার হওয়া স্বত্ত্বেও অনুদানের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদেরই একাংশ। আবার ছবিরাম বাগদি নামে দুঃস্থ এক দিন মজুর পরিবারকে রাজনৈতিক আক্রোশের জেরে আবেদন করা স্বত্ত্বেও বাড়ি তৈরির অনুদান দেওয়া হচ্ছে না বলে সরব হয়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

স্থানীয় গোড়লা গ্রামে খড়ের চালের একচিলতে ভগ্নপ্রায় বাড়িতে বাস করেন ছবিরাম বাগদি। দিন মজুরী করেই চলে একাদশ শ্রেণিতে পড়া ছেলের লেখাপড়া-সহ ৪ সদস্যের সংসার। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের সকলস্তরে আবেদন করেও বাড়ি তৈরির অনুদান জোটেনি। সবাই বলেছে আগে স্ত্রী’কে কংগ্রেস ছাড়তে বলো তারপর ভাবা যাবে।’’ স্ত্রী চায়না বাগদি বলেন, ‘‘আমি ২০০৩ সালে কংগ্রেসের হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। সেই থেকেই ওই দলেই আছি। সেইজন্যই আমাদের বাড়ি তৈরির অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমাদের ভগ্নপ্রায় বাড়িতেই প্রাণ হাতে নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই বাড়ির দেওয়াল, চাল ভেঙে পড়ছে। কখন সব হুড়মুড়িয়ে পড়বে বলে রাতে ঘুমোতে পারি না।’’

কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি রথীন সেন বলেন, ‘‘শুধু ছবিরামই নয়, রাজনৈতিক আক্রোশের জন্য বহু প্রকৃত দুঃস্থকে বঞ্চিত করে অবস্থাপন্নদের বাড়ি তৈরির অনুদান পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিডিও’কে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’’ এ দিকে সংশ্লিষ্ট হরিশাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বেদন ঘোষ বলেন, ‘‘ওই অনুদানের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা ব্লক প্রশাসন ওই অনুদান বরাদ্দ করে। তাই আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’

বার বার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সোমনাথ সাধু।

সাঁইথিয়ার বিডিও অতনু ঝুড়ি অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘রাজনৈতিক আক্রোশ কিংবা পক্ষপাতের অভিযোগ ঠিক নয়। শুধু আবেদন করলেই হয় না, নিজস্ব জায়গা-সহ কিছু নথিপত্রও জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement