সরকারি প্রকল্প শেষ খাতায়কলমে, বীজই পাননি চাষিরা

জমির উর্বরতা ফেরাতে নতুন ধানবীজ চাষের পরামর্শ দিয়েছিল কৃষি দফতর। সেই মতো বিকল্প বীজ হিসাবে উন্নতমানের ‘রাজেন্দ্র মাসুরি’ ধান চাষে নিজেদের সম্মতিও জানিয়েছিলেন শতাধিক চাষ। সরকারি খাতায় সেই বীজ-সহ চাষের প্রয়োজনীয় সামগ্রীও পৌঁছে গিয়েছে। চাষিদের ঘরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০৯
Share:

জমির উর্বরতা ফেরাতে নতুন ধানবীজ চাষের পরামর্শ দিয়েছিল কৃষি দফতর। সেই মতো বিকল্প বীজ হিসাবে উন্নতমানের ‘রাজেন্দ্র মাসুরি’ ধান চাষে নিজেদের সম্মতিও জানিয়েছিলেন শতাধিক চাষ। সরকারি খাতায় সেই বীজ-সহ চাষের প্রয়োজনীয় সামগ্রীও পৌঁছে গিয়েছে। চাষিদের ঘরে। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, সেই চিরাচরিত স্বর্ণধানই বাড়ছে চিহ্নিত দুশো বিঘা জমিতে। আর তার পরেই ওই সরকারি প্রকল্প সাঁইথিয়া ব্লকের দেরিয়াপুরে নিয়ে উঠেছে বড় দুর্নীতির অভিযোগ। যার কেন্দ্রে রয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল উপপ্রধান। কেন এমন হল, তার সদুত্তর দিতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারাও।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের সিদ্ধান্ত মেনে বিকল্প ধান রাজেন্দ্র মাসুরির চাষের সিদ্ধান্ত নেয় সাঁইথিয়া ব্লক কৃষি দফতর। সেই এলাকার ২০০ বিঘা জমিকে প্রদর্শন ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারই মধ্যে ছিল দেরিয়াপুর অঞ্চলের পুনুর ও দৈকোটা মৌজাও। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে চিহ্নিত হওয়া জমির চাষিদের হাতে ওই ধানবীজ দেওয়ার কথা। দেরিয়াপুরের চাষি অজিত পাল, বৈদ্যপুরের স্মরণ মণ্ডলদের অভিযোগ, কৃষি দফতরের কাছ থেকে তাঁরা কোনও বীজই পাননি। এমনকী, চাষিদের কোনও প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। খোঁজ করেও দফতরের কাছে এ ব্যাপারে চাষিরা সদুত্তর পাননি বলে অভিযোগ। বহু অপেক্ষার পরে বাধ্য হয়ে শেষমেশ চিহ্নিত জমিতে সেই পুরনো স্বর্ণধানই চাষ করেন তাঁরা। তাই সরকারি খাতায় থাকলেও বাস্তবে ওই এলাকায় উন্নত প্রযুক্তির রাজেন্দ্র মাসুরির চাষই হয়নি।

দফতর সূত্রের খবর, বর্ষায় অধিক ফলনশীল ধান হিসাবে স্বর্ণধানের বিকল্প নেই। কিন্তু বছরের পর বছর একই ধান লাগানোয় গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় স্বর্ণর ফলন কমতে শুরু করেছে। ফলন কমায় চাষিরাও লোকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু বিকল্প না পেয়ে এত দিন ওই চাষিরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্বর্ণ চাষ করেন। দৈকোটার চাষি মন্মথ মণ্ডল ও রণজিৎ বিত্তালদের কথায়, ‘‘এ বার বর্ষার আগে কৃষি দফতরের লোকজন স্বর্ণর বিকল্প ধান চাষ হিসাবে রাজেন্দ্র মাসুরি চাষ করার পরামর্শ দেন। ধানের বীজ, অনুখাদ্য, আগাছা মারার ওষুধ, পোকা মারার বিষ থেকে বীজ শোধন— সব কিছুই সরকার দেবে বলে আমাদের বলা হয়েছিল। দফতরের প্রস্তাবে আমরা রাজিও হয়েছিলাম।’’ তার পরেও ছবিটা বদলায়নি বলেই অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় পুনুরের দুই চাষি সুজয় মণ্ডল ও সুনীল মণ্ডলদের দাবি, কৃষি দফতরের লোকজন সময় মতো প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় শেষপর্যন্ত স্বর্ণ ধান লাগাতেই তাঁরা বাধ্য হন। ‘‘পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এলাকার ২০০ বিঘে জমিতে উন্নতমানের ওই ধান চাষের জন্য সাড়ে ১০ কুইন্ট্যাল ধান, পরিমাণ মত আগাছা মারার ওষুধ, বীজ শোধন ও অনুখাদ্য দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ স্বর্ণ বা অন্যান্য ধান অপেক্ষা ওই ধানের বীজের বাজারদরও অনেক বেশি। তার পরেও কোনও এক অজানা কারণে বীজ ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের কারও হাতে এসে পৌঁছয়নি।’’ চাষিদের ক্ষোভ, এ ব্যাপারে গত ল৩ অক্টোবরে বিডিও, ব্লক এগ্রিকালচারাল অফিসার এবং জেলা সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

কৃষি দফতরের দাবি, গত জুলাই মাসে আমোদপুরে সাঁইথিয়া ব্লকের কৃষি দফতরের অফিসে সই করে এলাকার চাষিদের মাস্টাররোল জমা দিয়েছিলেন দেরিয়াপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উত্তম গড়াই। একই সঙ্গে চাষিদের নামে ধানের বীজ ও অন্যান্য সামগ্রীও তোলেন। যদিও উত্তমবাবুর দাবি, ‘‘মাস্টাররোলে সই করে বীজ ও সামগ্রী আমিই তুলেছিলাম। কিন্তু তার পরে সেগুলোর কী হল, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’’ ওই তৃণমূল নেতার এমন দাবিকে যদিও মানতে নারাজ এলাকার চাষিরা। তাঁদের দাবি, ‘‘প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। সব বেরিয়ে আসবে।’’ কীভাবে এমনটা ঘটল, তার জবাব দিতে পারেননি ব্লক এগ্রিকালচারাল অফিসার রাজীব হাজরা। তিনি শুধু জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জেলা কৃষি আধিকারিক সমীরকুমার ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘বীজ-সহ অন্যান্য জিনিসগুলো জেলা থেকে ব্লকে পাঠানো হয়। ব্লক দফতরেই ওগুলো চাষিদের দেওয়ার কথা। এমনটা হয়ে থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’’ প্রায় একই সুর সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীরও। তিনি বলেন, ‘‘ধানের বীজ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি আমার কানে এসেছে। উপপ্রধান, প্রধান বা যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, কোনও রকম দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement