আগেই তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পুরুলিয়ার বাইরের ছেলেমেয়েদের নিয়োগপত্র নিয়ে এই জেলার প্রাথমিক স্কুলে কাজে যোগ দিতে দেবেন না। শুক্রবার তেমনই অভিযোগ উঠল জেলার কয়েকটি এলাকায়।
জেলায় টেট নিয়ে যে আন্দোলন চলছে তাঁদের অন্যতম নেতা তথা আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘বাইরের জেলার প্রার্থীদের আমরা এই জেলায় কাজে যোগ দিতে দেব না। এটা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি। এ দিনও আমাদের ছেলেরা কোথাও কোথাও মাইক নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় বাইরের জেলার প্রার্থীদের অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কোথাও কাউকে হুমকি দেওয়া হয়নি।’’ তবে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ওঁরা যে অভিযোগ তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারপরেও গা জোয়ারি করে শিক্ষকদের কাজে আটকে দেওয়া ঠিক নয়। এটা আন্দোলনের পথ হতে
পারে না।’’
সংরক্ষণ বিধি না মানার অভিযোগ তুলে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস চত্বরে পাঁচ দিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভ চলে। প্রশাসন তদন্তের আশ্বাস দেওয়ায় বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীরা অবস্থান তুলে নেন। সে দিনই কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখায়। শুক্রবারও বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা পুরুলিয়া শহরের জুবিলি ময়দান থেকে জেলাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত মিছিল করেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে এই প্যানেল বাতিল করতে হবে।’’
কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলনে নামলেও টেটের নিয়োগে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি বলে যাঁরা গোড়ায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁরা সে পথের পথিক নয় বলেই অনেকে মনে করছেন। শুক্রবার তাঁদের বিরুদ্ধে কয়েকটি স্কুলে নতুন শিক্ষকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগপত্র পেয়ে ঝালদা ২ ব্লকের একটি প্রাথমিক স্কুলে যোগ দিতে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলে যেতেই কয়েকজন এসে আমার বাড়ি কোথায় জানতে চাইলেন। বাড়ি পুরুলিয়ার বাইরে জানার পরেই তাঁরা আমাকে কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে যেতে বলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও কোনও ফল হয়নি।’’ ওই শিক্ষক পরে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে গোটা ঘটনাটি জানান। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রিয়াজ আনসারির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অভিযান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যাঁরা নতুন নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তাঁরা তো কোনও দোষ করেননি। তাঁদের কেন কাজে যোগ দিতে দেওয়া হবে না? নিয়োগে দুর্নীতি থাকলে সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হোক। সেই লড়াইতে আমাদেরও সমর্থন থাকবে।’’ পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হেমন্ত রজক বলেন, ‘‘স্কুলে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। ঘটনা সত্যি হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’