চলছে সংস্কারের কাজ। গতিরুদ্ধ হয়ে ধুলোময় যানজট। দুবরাজপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
মাস দু’য়েক আগে শুরু হয়েছিল বেহাল জাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ। অভিযোগ, সেই কাজের গতি এতটাই শ্লথ যে রাস্তার কাজ ঠিক কবে, সম্পূর্ণ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভরা বর্ষার শুরু আগে ওই রাস্তার ভবিষ্যত চিত্র কল্পনা করে তাই আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন রাস্তা ব্যবহারকারী এবং এলাকাবাসী। দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল এই রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় তাঁরা বিরক্তও।
ঘটনা হল, জাতীয় সড়কের মধ্যে থাকা দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় থেকে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত যে অংশটির কাজ চলছে, রাস্তার সেই অংশের অবস্থা-ই সব চেয়ে বেহাল ছিল। এলাকাবাসী ও রাস্তা ব্যবহারকারীদের দাবি, এমনিতেই বিশাল বিশাল গর্ত ও খানাখন্দে ভর্তি এই রাস্তা। তার উপর সেই রাস্তা দিয়েই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রচুর সংখ্যক যান চলাচল করে। এই পরিস্থিতিতে রাস্তার এক দিকের বিভিন্ন জায়গা খুঁড়ে দিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন তা ফেলে রাখা হচ্ছে। আর তার ফলেই রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। একফালি ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে ফেঁসে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। অফিসযাত্রী থেকে ওই রাস্তা ব্যবহারকারীরা বলছেন, ‘‘এমনিতেই দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি, এই আধ ঘণ্টার পথ যেতে প্রায় ঘণ্টাখানেকেরও বেশি লেগে যায়। তার উপর যানজটে ফাঁসলে সেটাই দু’-আড়াই ঘণ্টাও পেরিয়ে যায়। সবার উপর রয়েছে অসম্ভব ধুলোর জ্বালা।’’ সকলেরই প্রশ্ন, এই সড়ক-যন্ত্রণা আর কত দিন?
এ দিকে, অবস্থা আরও সঙ্গীন দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড়ের অবস্থা। ওই রাস্তার দু’পাশে থাকা জনপদ, হোটেল এবং গ্যারেজ-সহ প্রচুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে। এলাকাবাসী এবং ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ওই রাস্তা দিয়ে শ’য়ে শ’য়ে যানবাহন চলাচল করে। মূলত তার উপরেই এখানকার মানুষের রুজিরুটি নির্ভর করে। যখন রাস্তা বেহাল ছিল তখন রাস্তা থেকে ওঠা ধুলো থেকে মুক্তি পেতে গত ডিসেম্বরে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও শুরু করেন। ব্যবসায়ী সনাতন পাল, হাসিব চৌধুরী, ভক্তদাস পাল, পবন অগ্রবাল, তাপস চৌধুরীরা বলছেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগে রাস্তা সংস্কার শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, ধুলো যন্ত্রণা এখনও রয়েছে। কেউ দাঁড়াতে চায় না। ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, একটু দ্রুততার সঙ্গে রাস্তার কাজ শেষ না হলে সমস্যা মিটবে না।
রাস্তা সংস্কারের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, জাতীয় সড়কের রানিগঞ্জ থেকে সিউড়ি পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র নীরজ সিংহ অবশ্য সংস্কারের কাজে ওঠা শ্লথ গতির অভিযোগ মানতে নারাজ। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘রাস্তার ওই অংশটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বেড তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজে পাথরের সঙ্গে চিরাচরিত ভাবে পাথরের গুঁড়ো ব্যবহার করার বদলে সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে। রাস্তাটির বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। কিন্তু, সেটা জমতে কিছুটা বেশি সময় লাগে।’’ তাঁর দাবি, এমন একটি চূড়ান্ত যানবাহনে ঠাসা ব্যস্ত রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ নতুন করে করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা থাকবেই। সেটা সকলকে মেনে সহযোগিতা করা উচিত বলেও তাঁর মত। পাশাপাশি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাঁদের তরফে ঠিকাদার সংস্থাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।