জলসঙ্কট মোকাবিলায় হাতিয়ার সেই অবরোধই!
বুধবার সকাল সাতটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা বোলপুর–রাজগ্রাম রাজ্য স়ড়ক অবরোধ করে চলল বিক্ষোভ। তাতে যোগ দিলেন মুরারইয়ের রাজগ্রাম-সহ কোরাপাড়া, আম্বুয়া, মজুরকোলা, দালান পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দারা। দাবি একটাই— পর্যাপ্ত পানীয় জলের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। মুরারিয়ে যখন জলের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে তখন পানীয় জলের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে উদ্যোগী হল রামপুরহাট পুরসভা। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই।
বস্তুত, একদিকে দাবদাহ। তার উপরে পানীয় জলের সঙ্কট। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে লো-ভোল্টেজ সমস্যাও। ‘‘এত সব সমস্যা শুধু গরম পড়তেই নয়। বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে’’— দাবি করলেন রাজগ্রামের দিলীপ সরকার, গোবিন্দলাল বিশ্বাস, আম্বুয়া গ্রামের মমতাজ হোসেন, কোড়াপাড়ার হীরা কিসকুরা। সমস্যার সমাধানে এলাকাবাসী একাধিক বার প্রশাসনের সব স্তরে অভিযোগ, গণ স্বাক্ষর করে স্মারকলিপি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, রাস্তা অবরোধ কর্মসূচিও নিয়েছেন। প্রশাসনের টনক নড়েনি তাতেও। তারপরেও অবরোধ কেন?
প্রশ্নটা করতেই ফুঁসে উঠলেন অবরোধকারীরা। ক্ষোভ উগরে বললেন, ‘‘এ ছাড়া আমাদের আর কী-ই বা করার আছে?’’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, ১৯৮৪ সালে রাজগ্রাম পানীয় জল প্রকল্প চালু হয়। কিন্তু, এত দিনেও পাইপ লাইনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত জল আসছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাড়ির সাব মার্সিবল পাম্প চালাবেন, সেই উপায়ও নেই। কেন? দিলীপবাবু বললেন, ‘‘আর কেন? লো ভোল্টেজ!’’ সমস্যা এমনই যে, এই গরমেও ঠিক মতো আলো ও পাখা ঘুরছে না। এরই প্রতিবাদে এলাকাবাসী পথ অবরোধে সামিল হোন। পথ অবরোধের জেরে রাজগ্রাম–বোলপুর, রাজগ্রাম–পাকুড়, রাজগ্রাম–অজগরপাড়া রাস্তায় যান চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে।
দুপুরে মুরারই ১ ব্লকের বিডিও তপন হালদার বিদ্যুৎ দফতরের মুরারই গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সহকারি বাস্তুকারকে নিয়ে এলাকায় যান। এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে পানীয় জলের সমস্যা দূর করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দেন। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের কর্তারা আগামী পয়লা মে-এর মধ্যে লো ভোল্টেজ সমস্যার দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারপরেই তুলে নেওয়া হয় অবরোধ।
অন্য দিকে, পানীয় জলের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে উদ্যোগী হল রামপুরহাট পুরসভা। বুধবার পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে এ ব্যাপারে প্রচার চালানো হয়। পানীয় জলের অবৈধ সংযোগ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পাইপ ফুটিয়ে অবৈধ জলের সংযোগ যে বা যাঁরা নিয়েছেন সতর্ক করা হয়েছে তাঁদেরও।
পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির অভিযোগ, ‘‘বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ নেওয়ার পরে অনেকে বাড়িতে যন্ত্রের মাধ্যমে পানীয় জল নিজের বাড়ির ট্যাঙ্কে তুলে নিচ্ছেন। বাড়ির ভাড়াটিয়া-সহ, নিজের কাজেও যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে পাশের বাড়ির লোক অনেক সময় জল পাচ্ছেন না।’’ স্থানীয়দের থেকে অভিযোগ পেয়েই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা, জানাতে ভোলেননি তা-ও। যোগ করছেন, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকে তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে।তারপরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’