গোহমিকোচায় অবৈধ পাথর খাদানের রাস্তা কাটা হল। নিজস্ব চিত্র
বরাবাজারের বেআইনি পাথর খাদান বন্ধ করতে শুক্রবার থেকে অভিযান শুরু করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বরাবাজারের ওই খাদানগুলি নিয়ে নানা মহল থেকে অভিযোগ আসছিল। এ দিন থেকে অবৈধ খাদান বন্ধে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ এলাকায় যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়েছে।’’
অভিযানে একাধিক বেআইনি খাদানের রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পনেরো-কুড়ি বছর ধরে এই খাদানগুলি চলছে। প্রথমে খুব কম ছিল। ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়েছে। খবর পাওয়ার পরেই প্রশাসন এ দিন থেকে পদক্ষেপ শুরু করল। এই অভিযান চলবে।’’
অবৈধ খাদান চলার অভিযোগ পেয়ে গত ৯ জুন সরজমিন পরিস্থিতি দেখতে বরাবাজারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলেন সভাধিপতি। লটপদা গ্রামের অদূরে অবৈধ পাথর খাদান সরজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়ে সুজয়বাবুর চোখে পড়েছিল, খাদানের গায়ে বিস্ফোরণের জন্য তার টানা হয়েছে। বেআইনি খাদানগুলি চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেই মতোই শুরু হয়েছিল কাজ। শুক্রবার লটপদা পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক অবৈধ খাদানে আচমকা অভিযান চালায় প্রশাসন। গোহমিকোচা গ্রামের অদূরে কয়েকটি খাদানে হানা দেওয়ার আগে বিকট শব্দে গাড়িতে বসেই চমকে উঠেছেন আধিকারিকেরা। কিন্তু পৌঁছনোর পরে খাদানে শাবল, ঝুড়ি আর জুতো ছাড়া, কিছু মেলেনি।
এর পরেই এলাকা ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ছিলেন মহকুমাশাসক (মানবাজার) বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য, এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার, ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অর্ণব সেনগুপ্ত, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মলয় ধীবর, বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য। গোহমিকোচার বিস্তীর্ণ এলাকায় একাধিক খাদান রয়েছে। সেগুলিতে যাওয়ার মোরাম রাস্তাগুলি যন্ত্র দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। রাস্তা কাটার পরিকল্পনা নিয়েই প্রশাসন যন্ত্র সঙ্গে করে অভিযানে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (মানবাজার) মলয় ধীবর জানান, গোহমিকোচা ও লটপদা গ্রামের অদূরে যতগুলি অবৈধ খাদান ছিল, তা বন্ধ করতে রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৩ একর সরকারি জমিতে খাদানগুলি চলছিল। তবে জমির কতটা বন দফতরের আর কতটা খাস, তা এখনও চিহ্ণিত হয়নি। বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য জানান, খাদানের সঙ্গে সংযোগকারী ১৫টি মেঠো রাস্তা কাটা হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, এ দিন রাস্তা কেটে প্রায় ৩০-৩২টি খাদান বিচ্ছিন্ন করা গিয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয়বাবু এ দিন বলেন, ‘‘বরাবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০২টি বেআইনি খাদানের অস্তিত্ব মিলেছে। সেগুলিতে এলাকার অনেক মানুষ কাজ করেন। তাঁদের কর্মসংস্থানের দিকটিও ভাবা হচ্ছে।’’