বৈঠক: পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর অভিযোগ উঠছে রেশনে সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম জেলা সফরে গিয়ে এই ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এ দিকে, দোলের পরে তিনি পুরুলিয়াতে আসতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তার আগে শনিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে জেলার সমস্ত রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, আটা প্রস্তুতকারক সংস্থা ও কোরোসিন ডিলারদের নিয়ে বৈঠক করল প্রশাসন। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেশন নিয়ে অভিযোগ এলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।
রেশনের আটা নিয়ে প্রথম অভিযোগ উঠেছিল এই জেলা থেকেই। আটা কবে তৈরি, নিয়ম মেনে সেই কথা প্যাকেটে লেখা থাকছে না, মানও খারাপ— এই সমস্ত অভিযোগে বিধানসভায় সরব হয়েছিলেন বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। খতিয়ে দেখতে নেমে খাদ্য দফতর এই অভিযোগের সত্যতা পায়। আটার নমুনা সংগ্রহ করে সম্প্রতি পরীক্ষা জন্য পাঠানোও হয়েছে।
চাল নিয়েও কিছু দিন হল ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাস দু’য়েক ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রশাসনের কাছে সাধারণ মানুষের অভিযোগ আসছে। এ দিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘গণবন্টন নিয়ে কিছু জায়গায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এখানে যেন সেটা না হয়, সে জন্য বৈঠক ডাকা। এই জেলাতেও কিছু কিছু অভিযোগ উঠছে। খাদ্য দফতরকে বলব, গুরুত্ব দিয়ে শুনে সেগুলির সমাধান করতে।’’ রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে কী ভাবে কাজ করতে হবে, তা ব্যাখ্যা করেন জেলা খাদ্য নিয়ামক বাপ্পাদিত্য চন্দ্র।
উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সারদাদেবী মুর্মু, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রবালকান্তি মাইতি, সহকারি খাদ্য নিয়ামক নির্মল নাথ।
এ দিনের বৈঠকে জেলাশাসক বলেন, ‘‘চালের মান নিয়ে শুধু এক জন ডিলার আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। কেন? তাহলে তো ধরে নিতে হবে খারাপ চালই আপনারা বিলি করে অভ্যস্ত!’’ এখন ডিস্ট্রিবিউটররা ডিলারের কাছে রেশন পৌঁছে দেন। জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন, জিনিসের মান যদি খারাপ হয় তাহলে ডিলাররা যেন পত্রপাঠ ফিরিয়ে দেন। গ্রাহককে খারাপ খাবার দেওয়া কোনও ভাবেই চলবে না। যেমন এসেছে তেমনই বিলি করা হয়েছে— এই অজুহাত প্রশাসন শুনবে না।
বৈঠকে ছিলেন জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। গ্রাহকদের সঙ্গে যাতে খারাপ ব্যবহার না করা হয়, সেই ব্যাপারে তিনি সতর্ক করে দেন। জেলাশাসকও বলেন, ‘‘অনেকেই খারাপ চাল পেয়েও প্রতিবাদ করেন না। আপনাদের ভয় পান। হয়তো ভাবেন, প্রতিবাদ করলে যদি রেশনটাই বন্ধ হয়ে যায়।’’
গ্রাহকদের সঙ্গে আচরণে যাতে রেশন ডিলাররা মানবিক হন, সেই নির্দেশ দিয়ে সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘রেশন মানুষের ন্যাহ্য অধিকার। চালে সরকার ভর্তুকি দেয়। ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটররা তাঁদের পারিশ্রমিক পান। মানুষের অসুবিধা হলে প্রশাসন ছেড়ে কথা বলবে না।’’
ফিনাইল, সাবান বা নন-পিডিএস জিনিসপত্র গ্রাহকদের কিনতে যাতে বাধ্য না করা হয় সেই ব্যাপারে সতর্ক করেন তিনি। দফতরের কোনও পরিদর্শক হয়রান করলেও সেই অভিযোগ প্রশাসনের কাছে করতে বলা হয়েছে।
রেশন ডিলাররাও বৈঠকে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন। আড়শার এক ডিলার অভিযোগ করেন, প্যাকেটে আটা কম থাকে। তাঁকে সমর্থন করেন রঘুনাথপুরের এক ডিলারও। খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে বলা হয়।
রেশন ডিলারদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহ দেও বলেন, ‘‘আমাদেরও অনেক অসুবিধের মধ্যে কাজ করতে হয়।’’ ডিস্ট্রিবিউটরদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক দেবকুমার দাঁ বলেন, ‘‘শুনেছি, এ বার মূলত জেলার চালই গ্রাহকদের দেওয়া হবে। সেটা হলেই ভাল। বাইরের চাল আনলে মান নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। এ বার আমরা সমস্যা হলে প্রশাসনের নজরে আনব।’’