জ্যোতিষী বলেই ধৃত নেতাকে চিনত পাড়া

বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বুধবার দাবি করেন, ‘‘তরুণবাবু দায়িত্বশীল কর্মী। এমন কিছু পোস্ট তিনি করেন না যাতে এলাকায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি ও আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

ধৃত: তরুণ সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

ষোলো বছর ধরে তিনি দলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত। এখন দলের আইটি সেলের নেতা। কিন্তু কখনও উস্কানিমূলক কিছু পোস্ট করেন না, আসানসোল থেকে ধৃত তরুণ সেনগুপ্ত সম্পর্কে এমনটাই দাবি করছেন বিজেপি নেতারা। মঙ্গলবার রাতে আসানসোলের রাধানগর রোডের বাড়ি থেকে তরুণবাবুকে গ্রেফতার করে সিআইডি। একটি ভিডিও পোস্ট করায় তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকী সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ করেছিল সিউড়ির পুলিশ।

Advertisement

বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বুধবার দাবি করেন, ‘‘তরুণবাবু দায়িত্বশীল কর্মী। এমন কিছু পোস্ট তিনি করেন না যাতে এলাকায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে কী পোস্ট করেছেন, তা জানতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্তও হয়ে থাকতে পারে।’’ যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি।

এ দিন তরুণবাবুকে সিউড়ি আদালতে তোলা হলে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, তাঁর মক্কেল এমন কাজ করেননি যা সাম্প্রদায়িক স্থিরতা নষ্ট করে। তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করে দুই পুলিশ আধিকারিকের সমালোচনা করেছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় করা অপরাধমূলক নয়। সন্ত্রাসবাদের ধারা কেন সিআইডি প্রয়োগ করেছে, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কলকাতা থেকে আসা সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্ত পক্ষের দাবি নস্যাৎ করে বলেন, ‘‘যে ভাবে একটি পার্টির ব্যানার থেকে এই পোস্টটি করা হয়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পাশাপাশি সন্ত্রাসেও প্ররোচনা দেয়।’’ বিচারক প্রকাশচন্দ্র বর্মণ ধৃতের জামিনের আবেদন নাকচ করে আট দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বিজেপি-র বীরভূম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কালোসোনা মণ্ডল জানান, তাঁরা তরুণবাবুর পাশে আছেন।

Advertisement

আসানসোলের হিরাপুর থানার রাধানগর রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তরুণবাবু। সঙ্গে থাকেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। তাঁর স্ত্রী আসানসোলের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। প্রতিবেশীরা জানান, তরুণবাবু জ্যোতিষচর্চা করেন। বাড়ির দরজাতেও তিনি জ্যোতিষ গণনাকেন্দ্রের বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিজেপি-র কোনও কর্মসূচি নিয়ে তাঁকে বিশেষ মাততে দেখেননি।

এলাকায় খুব কম কথা বলেন। তবে পাড়ায় দোকান-বাজার করার সময়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে হেসে কথা বলতেই দেখা যেত।

বুধবার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের দরজায় তালা। দোতলায় থাকেন বাড়ির মালিক। গৃহকর্ত্রী অমৃতা কউর জানান, বছর দুয়েক আগে তরুণবাবুরা ভাড়ায় এসেছেন। ভাড়াটে হলেও তাঁদের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা হতো না। গত কয়েক দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন তরুণবাবু। ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী অসমে গিয়েছেন। রাতে যে তরুণবাবুকে সিআইডি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে, তা-ও তাঁদের জানা ছিল না। সকালে লোকজন জড়ো হওয়ায় তিনি ও প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতে পারেন।

এ দিন তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এমন পদক্ষেপের জন্য। সম্প্রতি আসানসোলে বেশ কিছু বিজেপি নেতা-কর্মীকে এমন উস্কানিমূলক আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। সাধারণ মানুষকেও কোনও উস্কানিমূলক আচরণ না করার আবেদন জানাচ্ছি।’’

সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘দেশ জুড়েই বিজেপি হানাহানি, দাঙ্গা বাধিয়ে মানুষকে ব্যতিবস্ত করে তুলছে। সম্প্রতি আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কিছু আচরণ তাতে আরও ইন্ধন দিয়েছে। আমরা এ সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছি।’’

কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী আবার দাবি করেন, ‘‘স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে উস্কানি দিতে বিজেপি কোটি-কোটি টাকা খরচ করছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তবে এ সব বন্ধ করতে রাজ্য যা করছে, তা লোক দেখানো। লাভ কিছুই হচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement