রঘুনাথপুর ২ ব্লকের করগালি ঘাট। —নিজস্ব চিত্র।
জলপ্রকল্প রয়েছে। কিন্তু তাতে শহরের তেষ্টা মেটে না। রঘুনাথপুর পুরসভার আশ্বাস দিচ্ছে, স্ট্যান্ড পোস্টের সামনে হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকার দিন এ বার ঘুচতে চলেছে। শহরে হবে আরও একটি নতুন প্রকল্প।
কবে? পুরসভা জানাচ্ছে, এই কাজের জন্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বরাদ্দ করছে ৭৮ কোটি টাকা। সম্প্রতি সেই প্রশাসনিক অনুমোদনের নথি পুরসভার হাতে চলে এসেছে। রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর সামান্য কয়েকটি প্রক্রিয়া বাকি আছে। সেগুলি মিটিয়েই দরপত্র ডাকা হবে।’’
রঘুনাথপুরে জল দেয় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর (পিএইচই)। নিতুড়িয়ার লক্ষ্মণপুরের ইন্দো জার্মান প্রকল্প থেকে জল আসে পুরশহরে। তবে জল সরবরাহ নিয়ে পিএইচই ও পুরসভার মধ্যে আকচা-আকচি দীর্ঘ দিনের। পুরসভার দাবি, চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ২.১ মিলিয়ন লিটার জল পাওয়ার কথা রঘুনাথপুরের। কিন্তু কাজের বেলায় পিএইচই জল দেয় তার অর্ধেক। গরমের দিনে পরিমাণটা আরও কমে যায়। তবে পুরসভার এই অভিযোগ মানতে নারাজ পিএইচই।
পুরসভার দাবি, এই দড়ি টানাটানির মধ্যেই তারা নিজস্ব জলপ্রকল্প তৈরির চেষ্টায় ছিল। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরে স্থির হয়েছিল, রঘুনাথপুর ২ ব্লকে দামোদরের করগালি ঘাট থেকে জল আনা যাবে। পাতা হবে কুড়ি কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন। শহর থেকে কিছুটা দূরে রক্ষতপুর গ্রামের কাছে তৈরি হবে জল পরিশোধন কেন্দ্র। সেই কাজের ডিপিআর (ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করে গত বছরের শেষে রাজ্যের পুর নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গোল বেধেছিল দু’টি ব্যাপারে। একটি হল টাকা। অন্যটি, ডিভিসির থেকে জলের অনুমোদন পাওয়া।
আশার আলো দেখা যায় চলতি বছর মার্চে। পুরুলিয়াতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কাছে শহরের সমস্যার কথা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ভবেশ তাঁকে জলপ্রকল্প থমকে থাকার ব্যাপারটি বলেন। বৈঠকে উপস্থিত পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে দ্রুত সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই প্রকল্পের কাজে গতি আসে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি।
সূত্রের খবর, দামোদরের করগালি ঘাট থেকে জল নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসন ডিভিসির সঙ্গে আলোচনায় বসে। পাশাপাশি শুরু হয়ে যায় টাকা বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া। পুরসভা সূত্রের খবর, ডিভিসি জল দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হওয়ার পরেই প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছেন পুর ও নগোরন্নয়ন দফতরের স্পেশ্যাল সেক্রেটারি।
পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার বিজয় মণি জানান, এখন পুরসভা ইন্দো জার্মান জল প্রকল্প ও নিজেদের আরও একটি প্রকল্প থেকে শহরের তিন হাজার বাড়িতে জল সরবরাহ করেয় কিন্তু বাড়িতে জলের সংযোগ নেওয়ার চাহিদা আরও বেশি।
এ ছাড়া বিভিন্ন দোকান ও হোটেল মিলিয়ে শহরে জলের শতখানেক বাণিজ্যিক সংযোগ দিয়েছে পুরসভা। বানিজ্যিক সংযোগের চাহিদা রয়েছে আরও। পুরপ্রধান জানান, ইন্দো জার্মান প্রকল্প থেকে যতটুকু জল পাওয়া যায় তাতে তাঁদের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, ‘‘নতুন প্রকল্প চালু হলে শহরে জলের সঙ্কট থাকবে না।’’
কী হবে এই নতুন প্রকল্পে? পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘আগে জল বাড়ন্ত হত, এ বার বাড়তি হবে।’’ পুরসভার দৈনিক জলের চাহিদা ৬ থেকে ৭ লক্ষ মিলিয়ন লিটার। নতুন প্রকল্পে দামোদর থেকে রোজ তোলা যাবে ৯ লিটার জল। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধাপে ধাপে আরও সাত হাজার বাড়ি ও পাঁচশোর মত দোকান, হোটেলে জলের সংযোগ দেওয়া হবে।” তার পরেও যা থেকে যাবে, সেটা দেওয়া হবে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতের কিছু গ্রাম আর শহর লাগায়ো ছোট কলকারখানায়।
শহরের সঙ্কট মেটাতে নতুন প্রকল্প দ্রুত চালু করতে চাইছে পুরসভা। ইতিমধ্যেই জল পরিশোধন কেন্দ্র তৈরি করতে রক্ষতপুর গ্রামের কাছে সিলেটা মৌজায় এক একর সরকারি জমি পুরসভাকে হস্তান্তর করে দিয়েছে প্রশাসন। টাকাও বরাদ্দ। প্রশাসনের অনুমতিও আছে হাতে। বাকি বলতে ডিভিসির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হওয়া। তারও তোড়জোড় চলছে।
শহরের বাসিন্দা কৌশিক সরকার, সুমিত মণ্ডলরা অবশ্য বলছেন, ‘‘খুবই সুখবর। তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’