পাবড়া পাহাড়ের অমোঘ আকর্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া জেলার ট্যুরিজম সার্কিটের মধ্যে রঘুনাথপুর ২ ব্লককেও আনতে চাইছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। সেই লক্ষ্যেই কাল, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের পর্যটন উৎসব। এলাকার দর্শনীয় স্থান পাবড়া গ্রামের পাহাড়ের নীচের মাঠে উৎসবের আসর বসবে। একসময়ে এই জায়গাতেই কয়েকটি সিনেমার শুটিং-ও হয়েছে।
পাশের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের জয়চণ্ডী পাহাড়ের পর্যটনের বিকাশে ‘জয়চণ্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব’-এর বড় ভূমিকা আছে। সেই পথেই রঘুনাথপুর ২ ব্লককে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার প্রয়াস শুরু হল।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকে পাবড়া পাহাড় ছাড়াও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত রয়েছে তেলকূপি।
দামোদর নদের মাঝে মাথা তুলে আছে দু’টি প্রাচীন দেউল।লোক গবেষকদের মতে, অধুনা তেলকূপির অতীতে নাম ছিল তৈলকম্প। এলাকাটা নদীপথে অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এখান থেকে নদীপথে ব্যবসা বিস্তৃত ছিল তাম্রলিপ্ত তথা তমলুক পর্যন্ত। এছাড়া আছে বান্দার দেউল। হেরিটেজ কমিশন এই দেউলটিকে সংরক্ষণ করছে। আছে তিনশো বছরের প্রাচীন মৌতোড়ের কালীমন্দির। বেশ কয়েকটি বড় জলাধারও আকর্ষণীয়।
রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিম্পা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের ব্লককে পর্যটনের সার্কিটে আনার লক্ষ্যেই পর্যটন উৎসব শুরু করা হচ্ছে। হোম-স্টে বা ছোটখাটো অতিথি নিবাস গড়বে পঞ্চায়েত সমিতি। জেলা পরিষদের সহায়তাও পাওয়া যাবে।’’
উৎসব কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূলের রঘুনাথপুর ২ ব্লক সভাপতি সঞ্জয় মেহেতা জানান, পর্যটন মরসুমে তেলকূপি, বান্দার দেউল, জলাধারগুলি ঘুরতে প্রচুর পর্যটক আসেন। কিন্তু এই ব্লকের পর্যটন নিয়ে সে ভাবে প্রচার হয়নি। এ বার পর্যটন উৎসবে তিন দিন ধরে স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। কলকাতার শিল্পীরাও আসবেন।
পাবড়া পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই পাহাড়তলিতে উৎসবের আসর বসছে। উৎসব কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় বলেন, ‘‘এই পাহাড়ে আগে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। স্থানীয় নীলডি পঞ্চায়েত পাহাড়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে হোম-স্টে বা ছোট অতিথি নিবাস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। সে জন্য সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লেই বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে। আমরা পর্যটন উৎসবের মাধ্যমে তার সূচনা করতে চাইছি।’’
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বাসিন্দা লোকগবেষক সুভাষ রায়ও মনে করেন এলাকায় পর্যটনের বিকাশের সম্ভাবনা প্রচুর। তিনি বলেন, ‘‘শুধু তেলকূপিই নয়, এই ব্লকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসের টানে এই সব জায়গার আকর্ষণ অন্যরকম। এত দিন এখানে পর্যটনের বিকাশে সরকারি উদ্যোগের অভাব ছিল। এ বার সেই ঘাটতি
মিটতে চলেছে।’’