এই পথেই ছাত্রীর উপর আক্রমণ হয়। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বভারতীর কলাভবনের এক ছাত্রীর উপরে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কলাভবনেরই এক ছাত্রকে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শান্তিনিকেতনের লালবাঁধে, সুনসান রাস্তায় ওই তরুণীর উপরে আক্রমণ হয় বলে অভিযোগ। ওই তরুণীর দাবি, ধৃত যুবক প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। অসীম সরকার নামে ওই অভিযুক্ত যুবককে বুধবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে। নদিয়ার পায়রাডাঙার বাসিন্দা অসীমকে বৃহস্পতিবার বোলপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, অসীম কলাভবনের সেরামিক বিভাগে স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া। আর টেক্সটাইল বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী অসমের বাসিন্দা। শ্যামবাটিতে একটি মেসে থাকেন। দু’জনের মধ্যে পরিচিতি বছর খানেকের। ছাত্রীটির অভিযোগ, গত নন্দন মেলার সময় অসীম তাঁকে প্রেম নিবেদন করেন। তিনি রাজি না হয়ে জানান, তাঁর বিয়ে টিক হয়ে রয়েছে। এর পর থেকেই অসীম তাঁকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর পিছু নেওয়া হুমকি দেওয়া চলছিল বলেও ওই তরুণীর অভিযোগ। তাঁর সহপাঠীদের কয়েক জনকে এই ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন।
লিখিত অভিযোগে ওই তরুণী দাবি করেছেন, বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ টেক্সটাইল বিভাগে একটি ওয়ার্কশপ শেষ করে সাইকেল চেপে মেসে ফিরছিলেন। তাঁর এক সহপাঠীও সঙ্গে ছিলেন অন্য একটি সাইকেলে। অসীম কলাভবনের বাইরে ওই তরুণীর জন্য একটি সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। রাস্তায় বেরিয়ে অসীমকে পিছু নিতে দেখে সাইকেলে গতি বাড়ান তাঁরা। লালবাঁধে তাঁদের ধরে ফেলেন অসীম।
ধাওয়া করে আক্রমণ
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার পরে ফিরছিলেন ছাত্রী
তাঁর এক সহপাঠীও অন্য একটি সাইকেলে ছিলেন
অভিযোগ, কলাভবন থেকেই পিছু নেয় অসীম
অসীমকে পিছনে দেখে গতি বাড়ান দু’জনে
জোরে সামনে এগিয়ে গিয়ে পথ আটকায় অসীম
অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘বাঁ দিক দিয়ে জোরে সাইকেল চালিয়ে পেরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় অসীম। অন্ধকারে বুঝতে পারিনি হাতে ধরা অস্ত্রটি ঠিক কী ছিল। তবে আমার বাঁ হাতে প্রথমে আঘাত করলেও হাত সরিয়ে নেওয়ায় লাগেনি। দ্বিতীয়বার হাতে লাগে। তবে ফুলহাতা সোয়েটার থাকায় কিছু হয়নি।’’ ওই তরুণী ও তাঁর সহপাঠীর চিৎকারে লোকজন জড়ো হতেই পালিয়ে যান অসীম। ঘটনাটি কলাভবনের শিক্ষকদের জানিয়ে শান্তিনিকেতন থানায় যান ওই তরুণী। অসীমের বিরুদ্ধে আক্রমণ করা, পথ আটকে ভয় দেখানো, খুনের চেষ্টা-সহ মোট চারটি ধারায় মামলা দায়ের হয়। রাতেই অসীমকে গ্রেফতার করলেও যে অস্ত্রটি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল সেটি পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পায়রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উকিলনাড়া পঞ্চবটি রোডে অসীমের একতলা বাড়ি। বাড়ির বাইরে এখনও প্লাস্টার হয়নি। তাঁর বাবা অসিত সরকার পেশায় কৃষক। তিনি অন্যের জমিতে চাষ করেন। অসীমের মা ফুলিয়ায় একটি কে জি স্কুলে কাজ করেন। এ দিন তিনি জানান, বুধবার ঘটনা ঘটেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা ছেলের বন্ধুরা কেউ খবর দেননি। স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক কষ্ট করে ওকে মানুষ করছি। এর আগে একবার আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিল। সেবার কোন রকমে বেঁচে গিয়েছিল। এ বার কী কাণ্ড ঘটাল, বুঝতে পারছি না। অসীমের সঙ্গে কোনও মেয়ের সম্পর্ক আছে বলে আমরা জানিও না। হয়তো একসঙ্গে লেখাপড়া করতে গিয়ে কিছু হয়েছে।”
শান্তিনিকেতনে এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৮ এর ৬ জানুয়ারি আনন্দ সদন ছাত্রী নিবাসে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হয়ে সঙ্গীত ভবনের এক ছাত্রীকে গুলি করে খুন করে এক যুবক। নিজেও আত্মঘাতী হয়। গত ১৫ জানুয়ারি বিদ্যাভবন ছাত্রাবাসের সামনে ছাত্র নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। বহু ঘটনাই পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয় না বলেও অভিযোগ। বিশ্বভারতীর সুবাদে বাইরের জেলা ও রাজ্যের মতো ভিন দেশেরও বহু তরুণ-তরুণী শান্তিনিকেতনে থাকেন। রাতের রাস্তা তাঁদের জন্য কতটা নিরাপদ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।