Jhalda School Teacher

পড়ুয়াদের টান ছিঁড়তে পারেনি  অবসর

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ যেখানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে, সেখানে ঝালদার কুটিডি হাই স্কুলের ওই শিক্ষককে নিয়ে গর্বের শেষ নেই এলাকাবাসীর।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

ঝালদা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৮
Share:

ক্লাস করাচ্ছেন তপনকুমার হালদার। ঝালদার কুটিডি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র debasishbanerjee981@gmail.com

কথায় বলে, শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, জীবনের ব্রত-ও। চাকরি থেকে অবসর নিলেও সেই ব্রতের নেশায় স্কুলের চৌহদ্দি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি এক শিক্ষক। অবসরের পরেও প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুটি নিয়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা রোজ স্কুলে এসে পড়ুয়াদের তিনি পড়াচ্ছেন ঝালদা শহরের নামোপাড়ার বাসিন্দা তপনকুমার হালদার।

Advertisement

রাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ যেখানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে, সেখানে ঝালদার কুটিডি হাই স্কুলের ওই শিক্ষককে নিয়ে গর্বের শেষ নেই এলাকাবাসীর।

২০১৯ সালে কুটিডি হাই স্কুল থেকে তপনকুমার অবসর গ্রহণ করেন। স্কুলের টিচার ইনচার্জ অরূপকুমার গোপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা স্কুলের তরফে তাঁকে সামান্য পারিশ্রমিক দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তবে তিনি হাসিমুখেই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্যাপারটা যদি অন্য ভাবে নেন, তাই আর জোরাজুরি করিনি।’’

Advertisement

শিক্ষা দফতর জানাচ্ছে, আশির দশকে ইচাগ হাই স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন তপন।
১৯৯৬ সালে বদলি হয়ে আসেন কুটিডি হাই স্কুলে। তারপর থেকে অবসরের দিন পর্যন্ত টানা এই স্কুলে কাটানোয় পড়ুয়াদের সঙ্গে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন তপন নিজেই। তপনের কথায়, ‘‘অবসরের কিছুদিন আগে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল।’’

তাঁর কয়েকজন সহকর্মী জানান, পড়ুয়ারাও তাদের ‘হালদার স্যর’কে ছেড়ে দিতে নারাজ ছিল। তপন বলেন, ‘‘ঠিক সেই অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মনের কথাটা বলে ফেলি। তাঁরাও না করেননি।’’

পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনও বিষয় অবলীলায় পড়িয়ে দিতে পারেন শরীরশিক্ষার শিক্ষক তপন। তবে উঁচু ক্লাসে তিনি একটু ‘সাবধানী’ খানিকটা রসিকতার ঢঙে জানান তিনি।

সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া মধুমিতা মাহাতো, রাজকুমার মাহাতো, গৌতম মাহাতো বলে, ‘‘হালদার স্যর এমন সহজ করে অঙ্ক বুঝিয়ে দেন যে ঘরে গিয়ে বিশেষ খাটতে হয় না। ওঁকে আমরা ছাড়ব না।’’

ভরসা করেন অভিভাবকেরাও। কুটিডির ফারিক আনসারি, ‘‘এ সমাজে তপন স্যরদের মতো শিক্ষকদের খুব প্রয়োজন।’’ গর্বিত তপনের স্ত্রী ময়নাও। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলটাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাই স্বামীকে নিয়ে যখন ভাল কথা শুনি, মনটা গর্বে ভরে ওঠে।’’

বিডিও (ঝালদা ১) মদনমোহন মুর্মুর কথায়, ‘‘শিক্ষকতা যে মহান ব্রত তা ওঁর মতো শিক্ষকেরা আজও সমাজকে আরও বেশি করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। মানুষ গড়ার ওই কারিগরের কাজকে কুর্নিশ জানাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement