স্কুলছাত্র বাড়ি ফেরাল ছোট্ট সোনুকে

বাবার সঙ্গে জামশেদপুরে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল বছর আটেকের ছেলেটি। কিন্তু ভুল ট্রেনে চেপে পড়ায় কোনও ভাবে বাবা-ছেলে পৌঁছে যান হুগলির ব্যান্ডেলে। স্টেশনে ভিড়ের চাপে বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিল পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার শশ গ্রামের বাসিন্দা সোনু লোহার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:২৮
Share:

সোনুর কাঁধে হাত দিয়ে বিজেন্দ্র। পিছনে সোনুর দাদু-ঠাকুমা। পাড়া থানায়। —নিজস্ব চিত্র।

বাবার সঙ্গে জামশেদপুরে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল বছর আটেকের ছেলেটি। কিন্তু ভুল ট্রেনে চেপে পড়ায় কোনও ভাবে বাবা-ছেলে পৌঁছে যান হুগলির ব্যান্ডেলে। স্টেশনে ভিড়ের চাপে বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিল পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার শশ গ্রামের বাসিন্দা সোনু লোহার। আশ্রয় পেয়েছিল ব্যান্ডেলেরই বাসিন্দা, এক স্কুলছাত্রের বাড়িতে। দ্বাদশ শ্রেণির সেই ছাত্রের উদ্যোগেই নিজের বাড়ি ফিরতে পেরেছে সোনু।

Advertisement

সেই বাড়ি ফেরানোও অবশ্য সহজ হয়নি। গ্রামের নাম বিভ্রাটের জেরে বাঘমুণ্ডির বদলে তারা পৌঁছে যায় পুরুলিয়ারই পাড়া থানার দুবড়ায়। সেখান থেকে অবশ্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে শেষ অবধি নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরেছে সোনু। রবিবার রাতে শশ গ্রাম থেকে সোনুর দাদু বাবুলাল লোহার ও ঠাকুমা ভাদু লোহার পাড়া থানায় এসে নাতিকে বাড়ি নিয়ে যান।

রবিবার পাড়া থানায় বসে দাদু বুধলাল লোহার জানান, দিন আটেক আগে তাঁর নাতিকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ছেলে রাজু লোহার। সে দিনই টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্যান্ডেল স্টেশনের সামনে সোনুকে একা বসে কান্নাকাটি করতে দেখে বিজেন্দ্রকুমার যাদব নামে ওই ছাত্র। বিজেন্দ্রর কথায়, ‘‘সোনুর সঙ্গে কথা বলার পরে সব জেনে ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। আট দিন আমাদের বাড়িতেই বাড়িতেই ছিল। সোনুর উপরে বাবা-মা, সকলেরই মায়া পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বাড়ির জন্য মন খারাপ করে ও কান্নাকাটি শুরু করায় বাবা আমার হাতে টাকা দিয়ে বলে, সোনুকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’’

Advertisement

শনিবার রাতে ব্যান্ডেল থেকে ট্রেন ধরে রবিবার সকালে তারা পুরুলিয়া পৌঁছয়। বিজেন্দ্রর কথায়, ‘‘সোনু শুধু গ্রামের নাম বলেছিল দুবদা। পুরুলিয়ায় নেমে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, দুবড়া নামের গ্রাম আছে। নাম বলতে ভুল করছে সোনু, এই ভেবে বাসে চেপে পাড়া থানার দুবড়ায় আসি। কিন্তু নামার পরে সোনু জানায় এটা তার গ্রাম নয়।’’ এ দিকে, দুবড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওদের দু’জনকে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে দেখে পাড়া থানার এক পুলিশকর্মীর সন্দেহ হয়। বিজেন্দ্রর কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা জেনে তাদের পাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সোনুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তার বাড়ি শশ গ্রামে। পাড়া থানায় কর্মরত এক এনভিএফের বাড়িও শশ গ্রামে। তাঁর মারফত ওই গ্রামে যোগাযোগ করে পুলিশ।

পাড়া থানার পুলিশই যোগাযোগ করে বুধলালবাবুর সঙ্গে। বাঘমুণ্ডি থানার সাহায্যে রাতেই পাড়ায় চলে আসেন সোনুর দাদু ও ঠাকুরমা ভাদু লোহার। দাদুকে দেখে খুবই খুশি হয় ছোট্ট সোনু। পুলিশ সব দিক নিশ্চিত হওয়ার পরেই সোনুকে বুধলালবাবুর হাতে তুলে দেয়। নাতিকে ফিরে পেলেও এখনও ছেলে রাজুর খোঁজ না পাওয়ায় অবশ্য পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না বুধলালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সোনু যে ওর বাবার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে, সেটাই আমরা জানতাম না। হঠাৎ পুলিশের ফোন পেয়ে আশ্চর্য হয়েছিলাম।” নাতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেন্দ্রর কাছে যে তাঁরা ঋণী, তা বাবরারই জানিয়েছেন বুধলালবাবু। সোনুকে তার দাদুর কাছে দেওয়ার সময়ে থানায় উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনের আদ্রার কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘পুরো ঠিকানা না জানা সত্ত্বেও যে ভাবে বিজেন্দ্র পুরুলিয়ায় এসেছিল সোনুকে তার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement