বক্তা: সংস্কৃত কলেজে অরিন্দম চক্রবর্তী। ছবি: শৌভিক দে।
আজ থেকে ১৩০ বছর আগে সংস্কৃত কলেজের প্রাণপুরুষ ভুল নিয়ে এক প্রহসন রচনা করেছিলেন। শেক্সপিয়রের ‘কমেডি অব এরর্স’-এর আদলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা ‘ভ্রান্তিবিলাস’ নাটকের কথা কে না জানে! রবিবার বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য সেই সংস্কৃত কলেজেই এক বক্তৃতায় দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী ‘ভুল’কে দেখালেন অন্য ভাবে।
দুই হাজার বছর আগের বৈষ্ণব দার্শনিক রামানুজাচার্যকে উদ্ধৃত করে অরিন্দম জানালেন, ঝিনুককে মুক্তো বলে ভাবাটা ‘ভুল’। কিন্তু সেই ভ্রান্তিতেও তো থেকে যায় জ্ঞান। কোনটা ঝিনুক আর কোনটা মুক্তো সেই জ্ঞান। বিশুদ্ধ জ্ঞান কখনওই হতে পারে না অশুদ্ধ। সংশোধন না থাকলে রইতে পারে না ভ্রান্তি।
আরও পড়ুন: ডাক্তারদের চাপ কমাতে দাওয়াই সেই ধ্যান
রামানুজের সমসাময়িক কাশ্মীরি রসতাত্ত্বিক অভিনবগুপ্তকেও বক্তৃতায় নিয়ে এলেন অরিন্দম। একদা জীবনানন্দকে নিয়ে তাঁর বইয়ে এই অভিনবগুপ্তকেই উদ্ধৃত করেছিলেন অরিন্দম। ‘ঘাসের শরীর ছেনে’…কী ভাবে ঘাসের শরীর ছেনে আনা যায়? অরিন্দম বুঝিয়েছিলেন, এই কল্পনাকেই সংস্কৃত কবিরা বলতেন ‘বিমর্শ’। আজও সেই ‘বিমর্শ’ ঘুরেফিরে এল তাঁর বক্তৃতায়, এলেন জয়ন্তভট্ট ও উদয়নাচার্যের মতো নৈয়ায়িকরা। পূর্বপক্ষকে ধূলিসাৎ করে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য প্রতিপন্ন করেছেন ঠিকই, আবার সমান তালে জানিয়ে গিয়েছেন, পূর্বসূরিদের ওই ভুলগুলিই তাঁদের সঠিক পথে আসতে সাহায্য করেছে। তাঁরা বলেছেন, তর্কশেষে ঠিক-ভুলের মইটাও ফেলে দাও। ওটিই সব নয়। ভুল প্রতিপন্ন করেও প্রতিপক্ষকে সব সময় সম্মান দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। পরমতসহিষ্ণুতা শব্দটি এক বারও উচ্চারণ করেননি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তার দরকারও ছিল না। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, শৈব থেকে বৈষ্ণব, বৌদ্ধ থেকে ন্যায়দর্শন সর্বত্র যে হাওযা বয়ে যেত, তারই কথা এ দিন শুনিয়ে গেলেন দার্শনিক।