দুবরাজপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী খুনে নিজে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বড় অংশকেই নিরপরাধ বলে দাবি করেছিলেন তিনি। তার ভিত্তিতে আদালতে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আর্জিও জানিয়েছিলেন। সমালোচনার মুখে অবস্থান বদলে এ বার সেই আর্জিই প্রত্যাহার করে নিলেন বীরভূম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার জেলা আদালতে যখন এই আর্জি রাখছেন পিপি, তার ঘণ্টাখানেক আগে ওই আদালতেই অমিত হত্যা-মামলার শুনানিতে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন করেন নিহতের স্ত্রী পুতুল সরকার চক্রবর্তী। স্বামীর মতোই পেশায় পুলিশের কর্মী পুতুলদেবী এ দিন শুনানি শুরুর আগে বলেন, ‘‘আমার স্বামী ডিউটি করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। তিনি-ই বিচার পাবেন না! তাই ছুটে এসেছি।’’
২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের আউলিয়া-গোপালপুর গ্রামে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন দুবরাজপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর অমিত। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা স্থানীয় যশপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি আলিম শেখ-সহ এলাকার একাধিক তৃণমূল ও সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। এ বছর ৫ জানুয়ারি ওই ঘটনায় পুলিশেরই জমা দেওয়া চার্জশিটে নাম থাকা অভিযুক্ত ৫০ জনের মধ্যে আলিম-সহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করার আর্জি সিউড়ি আদালতে জানান পিপি রণজিৎবাবু। এ কথা জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়ায় পুলিশের নিচুতলায়। স্তম্ভিত হন নিহতের পরিবারও। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, শাসকদলকে সুবিধা দিতেই মামলা প্রত্যাহারের ওই আবেদন করা হয়েছিল।
ঘরে-বাইরে চাপের মুখে শেষমেশ ওই বিতর্কিত আর্জি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল রাজ্য। এ দিন মামলার শুনানিতে এজলাসে দাঁড়িয়ে প্রথমেই রণজিৎবাবু বিচারককে জানান, ওই আবেদনটি তিনি আর এগোতে চান না। এমনকী, বিচারকের কাছে তিনি অধরা অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে দ্রুত চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আবেদনও করেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। তার পরেই ওই মামলায় এখনও পর্যন্ত ধৃত ১৫ জনের বিরুদ্ধেই খুন-সহ একাধিক ধারায় চার্জ গঠিত হয়। আগামী ১৫-১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।