বিধানসভা মিডিয়া সেন্টারে সুজন চক্রবর্তী ও আব্দুল মান্নান
কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এ রাজ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত। তারই পাশাপাশি রাজ্যে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ এবং বিকল্প আইন তৈরির দাবিও জোরালো হচ্ছে। বিধানসভায় কোনও পদক্ষেপ না হলে বিধায়কদের নিয়ে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। বিকল্প আইনের দাবি খারিজ না করেও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, কেন্দ্রকে আইন প্রত্যাহারে বাধ্য করিয়ে কৃষকদের বাঁচানোই এখন সব প্রতিবাদের মূল লক্ষ্য।
কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ‘কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ কাল, বুধবার শহরে রাজভবন অভিযান ও রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তার আগে সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সমন্বয় কমিটির তরফে অমল হালদার, কার্তিক পাল, অভীক সাহা, সুভাষ নস্কর, হরিপদ বিশ্বাস, সমীর পূততুণ্ডেরা দাবি করেছেন, কৃষকদের প্রতিবাদ ক্রমেই আরও বৃহত্তর আন্দোলনের চেহারা নিচ্ছে। তাঁদের মতে, এ রাজ্যের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষ ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতেই কালকের সমাবেশে তাঁরা সব ধরনের মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছেন। অমলবাবু, কার্তিকবাবুদের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের কালা কানুন জনগণের সংসদে বাতিল হয়ে গিয়েছে। মোদী সরকার জেদের বশে কিছু কাগজ আঁকড়ে বসে আছে! সরকারকে পিছু হঠতে বাধ্য না করা পর্যন্ত প্রতিবাদ থামবে না।’’
কৃষি আইনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহেই মেয়ো রোডে ধর্না-কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। ধর্মঘটেও নৈতিক সমর্থন ছিল শাসক দলের, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিবাদকে সমর্থন করেছিলেন। সেই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েই বাম কৃষক নেতারা এ দিন বলেছেন, রাজ্যে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ ও বিকল্প আইনের জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি নিজের রাজ্যে এই পদক্ষেপও করে দেখাক তৃণমূল। এই আবেদনে সাড়া না দিলে পরবর্তী স্তরে তাঁরা রাজ্যের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবেন।
একই দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁদের দাবি, রাজ্যে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে পাশ হওয়া কৃষি সংক্রান্ত বিল কেন্দ্রের আইনের সমগোত্রীয়। ওই দুই বিল প্রত্যাহার করতে হবে। বিধানসভার অধিবেশন ডেকে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অবিলম্বে ওই উদ্যোগ না হলে বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা ধর্নায় বসবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মান্নান ও সুজনবাবু। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘নজিরবিহীন’ দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।
রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্যে পৃথক আইন করলেই সব দিক রক্ষা হবে, এমন নয়। কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রকে বাধ্য করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই যে যেমন ভাবে পারছেন, প্রতিবাদ করছেন। তবে রাজ্যে আইন করা বা সব সম্ভাবনাই আমাদের ভাবনা-চিন্তা ও আলোচনার মধ্যে আছে।’’